অপমান সইতে না পেরে মৃত্যু?

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

নওগাঁর পত্নীতলায় প্রধান শিক্ষকের অপমান সইতে না পেরে দশম শ্রেণির এক ছাত্রের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। ওই ছাত্রের নাম রাব্বী হাসান (১৬)। এবার গগনপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু অসুস্থতার কারণে নির্বাচনী (টেস্ট) পরীক্ষায় দুটি বিষয়ে অংশ নিতে না পারায় অকৃতকার্য হয় সে। ফলে ফরম পূরণ করার সুযোগ দিতে অনুরোধ নিয়ে প্রধান শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেনের কাছে তাকে সঙ্গে গিয়ে গিয়েছিলেন তার মা।

প্রধান শিক্ষক রাব্বী ও তার মাকে বলেছিলেন, ফরম পূরণের সরকার–নির্ধারিত ফির সঙ্গে আরও ১ হাজার ৯০০ টাকা লাগবে। এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য স্কুলের কোচিংয়ের ফি এটি। এ সময় রাব্বীর মা ছেলেকে স্কুলের কোচিং করাবেন না জানালে মোয়াজ্জেম হোসেন রাব্বী ও তার মাকে অপমানজনক কথা বলেন এবং মা-ছেলেকে তাড়িয়ে দেন। মাকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে রাব্বী হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়।তৎক্ষণাৎ তাকে উদ্ধার করে পত্নীতলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আরএমও খালিদ সাইফুল্লাহ জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত (স্ট্রোক) কারণে ছাত্রটি মারা গেছে। তবে ময়নাতদন্ত করলে মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য জানা যেত।

ঘটনাটি গত রোববারের। প্রধান শিক্ষকের অপমানে সহপাঠীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে স্কুলের শিক্ষার্থীরা ফুঁসে ওঠে। অন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা এই ঘটনার বিচার চেয়ে পরদিন সোমবার ও গতকাল মঙ্গলবার এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন।

স্বজন ও সহপাঠীদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক নির্বাচনী পরীক্ষায় দু-এক বিষয়ে অকৃতকার্য অনেক শিক্ষার্থীকে কোচিংয়ের টাকা নিয়ে ফরম পূরণের সুযোগ দিয়েছেন। রাব্বীর মা কোচিংয়ের টাকা দিতে চাননি বলে রাব্বীকে ফরম পূরণ করতে তো দেনইনি, উল্টো তাঁদের অপমান করে অফিস থেকে বের করে দিয়েছেন। পরীক্ষা দিতে না পারার দুশ্চিন্তা, অপমানে আর ক্ষোভে রাব্বী অসুস্থ হয়ে যায়। একপর্যায়ে স্ট্রোক হয় তাঁর। এ ঘটনায় দায়ী প্রধান শিক্ষকের বিচার চেয়েছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।

এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসন তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কমিটির প্রধান উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোচাহাক আলী।

গগনপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও ঘোষনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘কোচিংয়ের টাকার কারণে তার পরীক্ষার ফরম পূরণ করা হয়নি—এ বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’ বিদ্যালয়ে ফরম পূরণের সময় কোচিংয়ের টাকা
আদায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রেজাল্ট ভালো করার জন্য স্কুলে কোচিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কেউ কোচিং করতে চাইলে সেটি পারবে। এটা বাধ্যতামূলক নয়।

উপজেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত দলের প্রধান ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোচাহাক আলী বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে জমা দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে তদন্তকাজ শুরু হয়ে গেছে।

ইউএনও লিটন সরকার বলেন, এ ঘটনায় তদন্তে কেউ দায়ী প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানানো হবে।