নিউমোনিয়ায় মেয়েশিশুর মৃত্যু বেশি

নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছেলে ও মেয়েশিশুর চিকিৎসায় হাসপাতালে কোনো পার্থক্য হয় না। কিন্তু তীব্র নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত মেয়েশিশুর মৃত্যু বেশি হয়। অন্যদিকে ছেলেশিশু ভর্তি হয় বেশি। গবেষকেরা বলছেন, হাসপাতালে ভর্তি করাতে পরিবার ছেলেদের অগ্রাধিকার দিয়ে থাকতে পারে।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি), যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের এমোরি গ্লোবাল হেলথ ইনস্টিটিউট, ঢাকা শিশু হাসপাতালের গবেষণায় নিউমোনিয়ার চিকিৎসায় এমন চিত্র উঠে এসেছে। বাংলাদেশের সরকারি–বেসরকারি সাতটি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশু রোগীদের নিয়ে করা এই গবেষণা প্রতিবেদনটি গত মার্চে প্লস ওয়ান সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।

প্রধান গবেষক ও আইসিডিডিআরবির অসংক্রামক রোগ শাখার বিজ্ঞানী আলেয়া নাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, নিউমোনিয়া নিয়ে ভর্তি হওয়া শিশুদের ৬৫ শতাংশ ছেলে। মেয়েশিশু এত কম কেন? এর পেছনে সামাজিক কোনো কারণ আছে কি না, তা নিয়ে আরও গবেষণা হওয়া উচিত।

বিশ্বব্যাপী পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ নিউমোনিয়া। বাংলাদেশেও শিশুমৃত্যুর প্রধান কারণ এ রোগটি। বছরে নিউমোনিয়ায় কমপক্ষে ২২ হাজার শিশু মারা যায়। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ৩৭ শতাংশ শিশু প্রশিক্ষিত চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর সেবা পায়।

গবেষকেরা কী দেখেছেন

দেশের সাতটি হাসপাতালে ২০০৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ভর্তি হওয়া ৬ হাজার ৮৫৬টি শিশু রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকেরা। ২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী এসব শিশুর ৩৫ শতাংশ ছিল মেয়েশিশু।

হাসপাতালে ভর্তি হওয়া সাধারণ নিউমোনিয়া ও তীব্র (সিভিয়ার) নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছেলে ও মেয়ের অনুপাত প্রায় সমান ছিল। কিন্তু মারাত্মক তীব্র (ভেরি সিভিয়ার) নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত মেয়েশিশুর সংখ্যা ছিল অনুপাতে বেশি।

>

প্রতিবছর বহু শিশু নিউমোনিয়ায় মারা যায়। 
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছেলে ও মেয়ের চিকিৎসায় বৈষম্য করে পরিবার।

গবেষকেরা তথ্য বিশ্লেষণ করে বলছেন,মা–বাবারা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের বেশি হাসপাতালে ভর্তি করেন। অথচ হাসপাতালে ভর্তির সময় দেখা যায়, তীব্র নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলেই মেয়েরা বেশি ভর্তি হয়। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত মেয়েশিশুর মৃত্যুঝুঁকি ছেলেদের চেয়ে বেশি। অন্যদিকে মারাত্মক তীব্র নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত মেয়েদের মৃত্যু ছেলেদের চেয়ে চার গুণ বেশি। কিন্তু এসব শিশুর চিকিৎসার ক্ষেত্রে হাসপাতালে কোনো বৈষম্য ছিল না।

প্রধান গবেষক আলেয়া নাহিদ বলেন, এ থেকে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্য আছে এবং এ কারণে চিকিৎসার ফলাফলে পার্থক্য দেখা যায়।

হাসপাতালে আনার সময় দেখা গেছে, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত সবচেয়ে কম বয়সী শিশুদের মধ্যে ছেলেদের বেশি হাসপাতালে আনেন বাবা-মা বা আত্মীয়রা। কিন্তু বয়স বেশি হলে পরিস্থিতি উল্টো হয়। বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের বেশি আনেন হাসপাতালে।

গবেষকেরা দেখেছেন, শিশুদের হাসপাতালে নেওয়ার ক্ষেত্রে মা–বাবার শিক্ষার ভূমিকা আছে। দশম শ্রেণির বেশি পড়াশোনা করেছেন, এমন বাবা মেয়েদের বেশি হাসপাতালে আনেন।

উপসংহারে গবেষকেরা বলছেন, হাসপাতালে ভর্তি করার সময় মেয়েশিশুরা তীব্র নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত থাকে। তাই মৃত্যুঝুঁকিও তাদের বেশি থাকে। মা–বাবারা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছেলে ও মেয়েশিশুদের ক্ষেত্রে ভিন্ন আচরণ করেন। এ বিষয়ে সামাজিক গবেষণা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক আবিদ হোসেন মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে যে আগে হাসপাতালে আসবে, তার সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ ক্ষেত্রে মেয়েশিশুর চেয়ে দ্রুত ছেলেশিশুকে হাসপাতালে আনা হয় কি না, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।