বাস খাদে, পানিতে নেমে যাত্রীদের উদ্ধার করলেন ওসি

পানিতে তলিয়ে আছে যাত্রীবাহী বাস। বাঁচার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছেন যাত্রীরা। এমন পরিস্থিতিতে একজন পুলিশ কর্মকর্তা পানিতে নেমে যাত্রীদের উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে প্রশংসায় ভাসছেন সেই পুলিশ কর্মকর্তা।

ঘটনাটি ঘটেছে শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলায়। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সোয়া নয়টার দিকে ডামুড্যা-শরীয়তপুর সড়কের খেজুরতলা এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাস ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাকে সাইড দিতে গিয়ে খাদে পড়ে যায়। বাসটি ৪০-৪৫ জন যাত্রী নিয়ে জাজিরার মঙ্গল মাঝির লঞ্চঘাটে যাচ্ছিল। দুর্ঘটনাস্থল থেকে ডামুড্যা থানার দূরত্ব প্রায় আধা কিলোমিটার। খবর পেয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান সেখানে ছুটে আসেন। একপর্যায়ে যাত্রীদের উদ্ধার করতে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে তিনিও পানিতে নেমে যান।

এই দুর্ঘটনায় তিন যাত্রী মারা গেছেন। নিহত ব্যক্তিরা হলেন ডামুড্যার সিড্ডা গ্রামের কামরুজ্জামান মুনশি (৪৫), কুলকুরি গ্রামের জুলহাস মোল্লা (২৮) এবং দক্ষিণ ডামুড্যা গ্রামের ইয়াকুব পাইক (৭০)। আহত হয়েছেন ২০ জন যাত্রী।

পানিতে নেমে ওসির যাত্রীদের বাঁচানোর এই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই সেই ছবি শেয়ার করে ওসি মেহেদী হাসানের প্রশংসা করছেন। শরীয়তপুরের জজকোর্টের আইনজীবী শহীদুল ইসলাম লিখেছেন, ‘কয়েক ঘণ্টা আগেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুলিশ আর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের অনিয়ম নিয়ে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছি। এদিকে আজ (মঙ্গলবার) শরীয়তপুরের ডামুড্যায় খাদে পড়ে যাওয়া বাস থেকে মানুষকে বাঁচাতে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে উদ্ধারকাজে নেমে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট থানার ওসি। তাঁকে স্যালুট জানাতে আমরা কেন পিছপা হব? খারাপ কাজে যেমন কঠোর সমালোচনা জরুরি, ভালো কাজে তার দ্বিগুণ শ্রদ্ধা দেখানো উচিত। ভালো কাজের প্রতিযোগিতা শুরু হোক।’

ডামুড্যা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিএম আল আমীন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ডামুড্যা থানার ওসি মেহেদী হাসান জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যেভাবে পানিতে নেমে উদ্ধারকাজে সহযোগিতা করেছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক ও ডামুড্যা পৌরসভা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের পক্ষ থেকে তাঁকে স্যালুট।’

জানতে চাইলে ডামুড্যা থানার ওসি মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানুষের চরম বিপদের মুহূর্তে যদি নিজেকে উজাড় করে দিতে না পারি, তাহলে আমরা কেমন মানুষ? আমি হয়তো ফায়ার সার্ভিসকে ফোন করে, উদ্ধারকাজ তদারকি করে দায়িত্ব শেষ করতে পারতাম। তবে এতে আমার আত্মা তৃপ্ত হতো না। বিপদের সময় বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোটাই বড় দায়িত্ব।’