যুবলীগের জাকিরের সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ, দুদকের মামলা

যুবলীগের নেতা জাকির হোসেনের সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাটের অন্যতম ঘনিষ্ঠ এই সহযোগীর বিরুদ্ধে আজ বুধবার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে সংস্থাটি।

মামলার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন দুদকের মুখপাত্র প্রণব কুমার ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, দুদকের ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করেছেন সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম।

যুবলীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জাকির হোসেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য। জাকির এক সময় কাকরাইলের পায়েল হোটেল ও ম্যাডোনা হোটেলের গ্লাস বয় ছিলেন। সেই চাকরি ছেড়ে তিনি একটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানে পিয়নের চাকরি নেন। সেখান থেকেই ঘনিষ্ঠতা বাড়ে সম্রাটের সঙ্গে। সূত্র আরও জানিয়েছে, জাকির সম্রাটের খুবই বিশ্বস্ত। সম্রাট যাদের দিয়ে ক্যাসিনো ব্যবসা চালাতেন তাঁদের মধ্যে জাকির অন্যতম। সূত্র বলছে, সম্রাটের ক্যাসিনো বাণিজ্যের অঢেল টাকার একটি বড় অংশ গচ্ছিত আছে জাকিরের কাছে।

জাকিরের বিরুদ্ধে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, অনুসন্ধানের সময় বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে পাওয়া তথ্যমতে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে চলতি, সঞ্চয়ী ও এফডিআর হিসাবে ৪ কোটি ৬৪ লাখ ৮ হাজার টাকা জমা আছে। এ ছাড়া গত করবর্ষে (২০১৮-১৯) তিনি তাঁর আয়কর নথিতে ৮৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য দিয়েছেন। কিন্তু দুদকের অনুসন্ধানে তাঁর সর্বমোট ৫ কোটি ৪৯ লাখ ৩ হাজার টাকা অর্জনের সুনির্দিষ্ট কোনো উৎস পাওয়া যায়নি।

এজাহারে আরও বলা হয়, ক্যাসিনোসহ বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা থেকে জাকিরের অবৈধ আয়ের অর্থ দিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকাসহ দেশের বাইরে বিপুল সম্পদ অর্জনের তথ্য দুদকের হাতে আছে। মামলার তদন্তের সময় প্রমাণ সংগ্রহের মাধ্যমে সেগুলো আমলে নেওয়া হবে।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জাকিরের নামে কেনা সম্পদের তথ্য দুদকের হাতে থাকলেও এখন পর্যন্ত সে সংক্রান্ত নথি হাতে পায়নি সংস্থাটি। মামলার তদন্তের সময় বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়ে ওই সব সম্পদের মালিকানা বিষয়ে নিশ্চিত হবে সংস্থাটি। সূত্রটি বলছে, রাজধানীর পুরানা পল্টন ও বিজয়নগরে তার তিনটি বাড়ি আছে। রাজধানীর শান্তিনগর, সেগুনবাগিচা, বিজয়নগর ও সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় ফ্ল্যাট আছে ২৮টি। গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে আছে ১০০ কাঠা জমি। কাকরাইলের ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারের যে ভবনটিকে ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট তাঁর কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করতেন ওই ভবনের চতুর্থ তলাও জাকিরের কেনা। সেখানেই প্রথম সম্রাট তাঁর অফিস করতেন। পরে ওই ভবনের অন্য তলাগুলোও দখলে নেওয়া হয়।

সেপ্টেম্বরে শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এ নিয়ে ১৪ টি মামলা করল দুদক। এর আগে ঠিকাদার জি কে শামীম, বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক এনু ও তাঁর ভাই রুপন ভূইয়া, অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান, বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেন ভূইয়া, কলাবাগান ক্লাবে সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ এবং যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক আনিসুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী সুমি রহমান এবং কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান, তারেকুজ্জামান রাজীব, ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও এনামুল হক আরমানের বিরুদ্ধে আলাদা মামলা করেছে দুদক।