পরীক্ষা কেন্দ্রে কোচিং করানোর দায়ে শিক্ষককে অর্থদণ্ড

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের কোচিং করানোর দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত এক শিক্ষককে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন। আজ বুধবার সকালে সারিয়াকান্দি উপজেলার ফুলবাড়ি গমির উদ্দিন বহুমুখী স্কুল অ্যান্ড কলেজে জেএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।

জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা উপলক্ষে আগামী ২৫ অক্টোবর থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত টানা ২২ দিন দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের নেতৃত্ব দেন সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাসেল মিয়া। আর দণ্ডিত শিক্ষকের নাম মোছা. মমতাজ বেগম। তিনি ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্কুল শাখার ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক।

ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্র জানায়, আজ ছিল জেএসসির বিজ্ঞান বিষয়ক পরীক্ষা। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে সকাল আটটা থেকে পরীক্ষা কেন্দ্র এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেন সারিয়াকান্দি উপজেলার ইউএনও । কিন্তু ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে কেন্দ্রের একটি কক্ষে কোচিং করাচ্ছিলেন সহকারী শিক্ষক মমতাজ বেগম। এ খবর পেয়ে সকাল পৌনে দশটার দিকে সেখানে পুলিশ নিয়ে ইউএনও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মমতাজ বেগমকে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করেন।

সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে পরীক্ষা কেন্দ্রে কোচিং করানো এবং সুষ্ঠু পরীক্ষা গ্রহণে বাধা দেওয়ায় আইন অনুযায়ী শিক্ষিকা মমতাজ বেগমকে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে।

ফুলবাড়ি গমির উদ্দিন বহুমুখী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোকছেদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, বিধিভঙ্গ করে বিদ্যালয় চলাকালে শিক্ষার্থীদের কোচিং না করানোর জন্য ওই শিক্ষককে একাধিকবার মৌখিকভাবে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি কাউকে এত দিন পাত্তা দেননি।

মমতাজ বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ক্লাস বসার আগে বা পরে নিজ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ানোতে আইনগত কোনো বাধা নেই। নিয়ম মেনেই তিনি পরীক্ষা শুরুর আগে শিক্ষার্থীদের ছুটি দিয়েছেন। কিন্তু পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে শিক্ষার্থীরা বের হতে দেরি করার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালত অর্থদণ্ড করেছে।

‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং-বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২’ অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসার কোনো শিক্ষক তাঁর নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতে বা প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না। এমনকি শিক্ষকেরা বাণিজ্যিক কোচিং সেন্টারেও পড়াতে পারবেন না। তবে দিনে অন্য প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ১০ শিক্ষার্থীকে নিজ বাসায় পড়াতে পারবেন। সরকার-নির্ধারিত টাকার বিনিময়ে প্রতিষ্ঠানের ভেতরই পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ক্লাস করানো যাবে।

এই নীতিমালা না মানলে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে জড়িত শিক্ষকের বেতনের সরকারি অংশ (এমপিও) বাতিল বা স্থগিত করা হবে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি ও পাঠদানের অনুমতি বাতিল করা হবে। অন্যদিকে নীতিমালা লঙ্ঘন করলে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ক্ষেত্রে অসদাচরণের দায়ে সরকারের শৃঙ্খলা ও আপিল বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।