দুর্ঘটনা এড়াতে সচেষ্ট থাকার অঙ্গীকার রেলমন্ত্রীর

নূরুল ইসলাম সুজন। ফাইল ছবি
নূরুল ইসলাম সুজন। ফাইল ছবি

ভবিষ্যতে সব ধরনের রেল দুর্ঘটনা এড়াতে রেলপথ মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী সচেষ্ট থাকবেন বলে জাতীয় সংসদে অঙ্গীকার করেছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় সংসদে কার্যপ্রণালি বিধির ৩০০ ধারায় বিবৃতি দেন রেলমন্ত্রী। এ সময় তিনি এই অঙ্গীকার করেন।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বিবৃতিতে রেলমন্ত্রী বলেন, ১২ নভেম্বর মন্দবাগ স্টেশনে রাত ২টা ৪৫ মিনিটে দুর্ঘটনা ঘটে। সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস এবং চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথা ট্রেন দুটিকে মন্দবাগ রেলস্টেশনে ক্রসিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়। আর উদয়ন এক্সপ্রেস ১৬টি কোচসহ মন্দবাগ স্টেশনের ৩ নম্বর লুপ লাইনে গমন করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ট্রেনটি লাইনে প্রবেশ করছিল। ১৬টি কোচের মধ্যে ১২টি কোচ ওই লাইনে প্রবেশ করে। অন্যদিকে ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথার ২ নম্বর মেইন লাইনের আউটার সিগন্যালে অপেক্ষায় থাকার কথা। সংকেত দেওয়া হয়েছিল। তূর্ণা নিশীথার লোকোমাস্টার ওই সংকেত অমান্য করে সামনের দিকে অগ্রসর হন। ৩ নম্বর লাইনে প্রবেশরত উদয়ন এক্সপ্রেসের ১৩তম কোচে তূর্ণা নিশীথা আঘাত করলে দুর্ঘটনাটি ঘটে।

রেলমন্ত্রী বলেন, এই দুর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে আখাউড়া ও লাকসাম থেকে দুটি উদ্ধারকারী ট্রেন ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। সকাল ৭টা ২০ মিনিটে রিলিফ ট্রেন উদ্ধারকাজ শুরু করে। সকাল ৯টা ২০ মিনিটে উদ্ধারকাজ সম্পন্ন হয়। ১০টা ২৫ মিনিটে আবার ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এ ঘটনায় ১৬ জন যাত্রী মারা যান। আহত হয়েছেন ৫৪ জন। আহত ও নিহত সবাই উদয়নের যাত্রী ছিলেন। লোকোমোটিভ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রেলওয়ের প্রায় ৪০ লাখ টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে।

রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনার সংবাদ ভোররাতে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানান। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি দুর্ঘটনাস্থলে যান। ভোর ছয়টা নাগাদ তিনি রওনা হন। এর আগে রাত চারটার দিকে রেলসচিব, ডিজি ও কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে রওনা হন। র‍্যাব, পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জনগণ উদ্ধারকাজে অংশ নেন। তিনি এ জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

রেলমন্ত্রী বলেন, রেলওয়ের পক্ষ থেকে দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১০ জন, ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে ৯ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩ জন, কসবা হাসপাতালে ৩ জন, ঢাকা সিএমএইচে ৭ জন ও সিলেট ওসমানী মেডিকেলে ৪ জন—প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়। রেলওয়ে থেকে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে এক লাখ টাকা করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

তূর্ণার লোকোমাস্টার সংকেত অমান্য করায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বলে জানান রেলমন্ত্রী। তিনি বলেন, এ দুর্ঘটনার জন্য কর্তব্যরত তিনজনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁরা হলেন লোকোমাস্টার তাসির উদ্দিন, সহকারী লোকোমাস্টার অপু দে ও ওয়ার্কিং গার্ড আবদুর রহমান। ঘটনাটি তদন্তে বিভিন্ন পর্যায়ে চারটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।