এসএসসির ফরম পূরণে বাড়তি টাকা আদায়

একদিকে ফরম পূরণে নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। আবার তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কোচিং ফির ধকল। এই চিত্র চট্টগ্রামের রাউজানের বেশির ভাগ বিদ্যালয়ে। স্বাভাবিকভাবেই বাড়তি অর্থ দিতে গিয়ে কষ্টে পড়ছেন ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা।

এসএসসি পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা বেশ কিছুদিন ধরে অতিরিক্ত ফি নেওয়ার বিষয়ে অভিযোগ করে আসছিলেন। গত মঙ্গলবার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে সেই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

রাউজান উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে ১১ নভেম্বর থেকে। চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। 

ফরম পূরণে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড নির্ধারিত ফি হচ্ছে বিজ্ঞান বিভাগে ১ হাজার ৯৭০, মানবিক ও ব্যবসায় বিভাগে ১ হাজার ৮৫০ টাকা। এর বাইরে কোনো ফি নেওয়ার বৈধতা নেই। 

কিন্তু শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে তার উল্টো চিত্র পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ৩ হাজার ৮০০ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যে দেড় হাজার টাকা কোচিং ফি বাবদ। বাকি অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে উন্নয়ন ফির নামে।

সরেজমিন

এই প্রতিবেদক উপজেলার উরকিরচর উচ্চবিদ্যালয়, হারপাড়া উচ্চবিদ্যালয়, মুসলিম উচ্চবিদ্যালয়, নোয়াপাড়া উচ্চবিদ্যালয় ও গশ্চি উচ্চবিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এসব বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত ফি নেওয়ার সত্যতা পাওয়া গেছে।

হারপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ে কথা হয় প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিদ্যালয়ে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৯১ জন। তার মধ্যে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৫১ জন ফরম পূরণ করেছে। যারা ফরম পূরণ করেছে তাদের মধ্যে মানবিক ও ব্যবসায় বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ২ হাজার ৪০০ টাকা করে। এর বাইরে কোচিং ফি বাবদ নেওয়া হয়েছে দেড় হাজার টাকা। অর্থাৎ এ দুটি বিভাগে মোট ৩ হাজার ৯০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। অন্যদিকে বিজ্ঞান বিভাগে ফরম পূরণ বাবদ নেওয়া হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ টাকা। আর কোচিং ফির নামে নেওয়া হয়েছে দেড় হাজার টাকা। অর্থাৎ মোট ৪ হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। 

>

ফরম পূরণে নেওয়া হচ্ছে ৩ হাজার ৮০০ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত

অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য নেওয়া হচ্ছে। বাকি টাকা শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ের জন্য। 

গশ্চি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ হানিফ বলেন, তাঁর বিদ্যালয়ে মোট পরীক্ষার্থী ১৫৩ জন। এর মধ্যে ৭০ জন ইতিমধ্যে ফরম পূরণ করেছে। তাদের কাছ থেকে ফরম পূরণ বাবদ নিয়েছেন ২ হাজার ৭০০ টাকা। কোচিং ফি নেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৬০০ টাকা করে। তবে অতিরিক্ত ফি ফেরত দেবেন বলে জানান মুহাম্মদ হানিফ।

একই চিত্র পাওয়া গেছে নোয়াপাড়া উচ্চবিদ্যালয় ও উরকিরচর উচ্চবিদ্যালয়েও। এ দুটি বিদ্যালয়েও পরীক্ষার ফরম পূরণ বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা। 

এসব বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক প্রথম আলোকে ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, নির্ধারিত ফি দিতেই তাঁদের কষ্ট হয়। সেখানে বাড়তি অর্থ দেওয়া এক প্রকার দুঃসাধ্য। কিন্তু বাধ্য হয়ে দিতে হচ্ছে। 

বোর্ড নির্ধারিত ফির বেশি অর্থ আদায়ের কোনো সুযোগ নেই বলে জানান রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জোনায়েদ কবির। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যদি কোনো প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত টাকা নিয়ে থাকে তাহলে সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।