তেঁতুলিয়া থেকে ঢাকা, এক হেমন্তের দুই রূপ

তেঁতুলিয়ার ৬ নম্বর ভজনপুকুর গ্রামের খোলা ধানখেত থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা এভাবেই দেখা যায়। ছবিটি গত ৯ নভেম্বর বিকাল ৫টা ২০ মিনিটে তোলা। ছবি: ফিরোজ আল সাবাহ
তেঁতুলিয়ার ৬ নম্বর ভজনপুকুর গ্রামের খোলা ধানখেত থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা এভাবেই দেখা যায়। ছবিটি গত ৯ নভেম্বর বিকাল ৫টা ২০ মিনিটে তোলা। ছবি: ফিরোজ আল সাবাহ

এ যেন ৪টি ৪-এর সমাহার। ৪৪৪ দশমিক ৪। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের শেষপ্রান্ত পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলা থেকে রাজধানী ঢাকার দূরত্ব ৪৪৪ দশমিক ৪ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে বাধাহীনভাবে সড়কপথে যেতে সময় লাগে সোয়া ১২ ঘণ্টা। 

দূরত্ব তেমন বেশি নয়, কিন্তু একই দেশের এই দুই অঞ্চলে প্রকৃতির মেজাজ এখন একেবারেই দুই ধরনের। শীতকাল না এলেও তেঁতুলিয়ায় শীতের কাঁপন লেগে গেছে খুব ভালোভাবে। প্রতিদিন এখানে বিকেল না হতেই উত্তরের হিম বাতাস চলে আসছে। লোকজন গরম কাপড় পরে বাইরে বেরোচ্ছে। এত দিন বনবন করে ঘুরতে থাকা ঘরের বৈদ্যুতিক পাখার ছুটি মিলেছে। আড়মোড়া ভেঙেছে সযত্নে ভাঁজ করে রাখা কাঁথা-কম্বল। এসব কথা গতকাল বুধবার শোনা গেল তেঁতুলিয়ার সরকারি কর্মকর্তা আবু সাঈদ চৌধুরীর কাছ থেকে।

তেঁতুলিয়ার ৬ নম্বর ভজনপুকুর গ্রামের খোলা ধানখেত থেকে সিনিওলচু পর্বতকে এভাবেই দেখা যায়। ছবিটি গত ৯ নভেম্বর ভোর ৫টা ২০ মিনিটে তোলা। ছবি: ফিরোজ আল সাবাহ
তেঁতুলিয়ার ৬ নম্বর ভজনপুকুর গ্রামের খোলা ধানখেত থেকে সিনিওলচু পর্বতকে এভাবেই দেখা যায়। ছবিটি গত ৯ নভেম্বর ভোর ৫টা ২০ মিনিটে তোলা। ছবি: ফিরোজ আল সাবাহ

পঞ্চগড়ের এই শীতল আবহাওয়ায় আবার উঁকি দিচ্ছে হিমালয়ের কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বত। ওই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করতে তেঁতুলিয়ার ভুতিপুকুর গ্রামে প্রায় প্রতিদিন ছুটে যাচ্ছেন ফিরোজ আল সাবাহ নামের এক তরুণ। একসময়ের শৌখিন ফটোসাংবাদিক এখন পুরোপুরি পেশাদার। প্রকৃতিকে ভীষণ ভালোবাসেন। অপরূপ কাঞ্চনজঙ্ঘা চোখের সামনে এলে তো কথাই নেই ফিরোজের।
আজ বৃহস্পতিবার ফিরোজ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে পঞ্চগড়ে শীত পড়তে শুরু করেছে। এখন বলতে গেলে বেশ ভালোই শীত পড়েছে। তবে কুয়াশা তেমন নেই। ভোরবেলা কিছুটা পড়ে। আবহাওয়া বেশ চমৎকার। আবহাওয়া ভালো থাকলে এ সময় কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। শুধু কাঞ্চনজঙ্ঘা নয়, তেঁতুলিয়া থেকে উত্তর দিকে তাকালে হিমালয়ের আরও কিছু পর্বত এখন দেখা যাচ্ছে।

তেঁতুলিয়ায় যে কার্তিক মাসে শীত পড়েছে, সে কথা আবহাওয়া অধিদপ্তরও জানিয়েছে। আজ সকালে তাদের তথ্য অনুযায়ী, তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সারা দেশের মধ্যে এটিই ছিল সবচেয়ে কম তাপমাত্রা।

পঞ্চগড়ে কুয়াশামাখা সকাল। ছবি: রাজিউর রহমান
পঞ্চগড়ে কুয়াশামাখা সকাল। ছবি: রাজিউর রহমান

তেঁতুলিয়া পর রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা কত ছিল? জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়, আজ সকাল ৯টায় এটি ছিল ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ ৪৪৪ দশমিক ৪ কিলোমিটার দূরত্বের ব্যবধানে উষ্ণতা বেড়েছে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

সকাল সাড়ে ১০টায় তেঁতুলিয়ার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৯ দশমিক ৫ এবং রাজধানীতে ২২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

হেমন্তকালে এসেও তাই রাজধানীতে শীতের ছোঁয়া নেই বললেই চলে। রাতের বেলা নগরবাসীর ফ্যান ছাড়ার অভ্যাস হয়তো রয়েছে। এর সঙ্গে রাজপথে ধুলোবালি। সকাল ১০টা থেকে বিকেল আসার আগ পর্যন্ত এখন গরমকালের অস্তিত্ব খানিকটা হলেও টের পাওয়া যায়।

পঞ্চগড়ে কুয়াশামাখা সকাল। ছবি: রাজিউর রহমান
পঞ্চগড়ে কুয়াশামাখা সকাল। ছবি: রাজিউর রহমান

হেমন্তকালে কেন এই অবস্থা? জানতে চাইলে আবহাওয়ার অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুদ্দীন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, অপরিকল্পিত এই শহরে বিলম্বিত হেমন্তকাল।

কুয়াশা নয়, উন্নয়নমূলক কাজের জন্য পোস্তগোলা সেতুসংলগ্ন এলাকায় ধুলো-ধোঁয়াশায় ছেয়ে গেছে। ঢাকা, ১৪ নভেম্বর। ছবি: দীপু মালাকার
কুয়াশা নয়, উন্নয়নমূলক কাজের জন্য পোস্তগোলা সেতুসংলগ্ন এলাকায় ধুলো-ধোঁয়াশায় ছেয়ে গেছে। ঢাকা, ১৪ নভেম্বর। ছবি: দীপু মালাকার

খানিকটা হেসে তিনি আবার বলেন, অপরিকল্পিত শহরে অপরিপক্ব হেমন্তকাল। এই শহরে এত ভবন। এগুলো সূর্যতাপ ধরে রাখে। তাপ কমানোর গাছপালাও কম। এর সঙ্গে ভবনগুলো একটির গায়ের সঙ্গে আরেকটি জোড়া লাগানো। বাতাস সহজে বয়ে যেতে পারে না। বাধা পায়। তাই শীতের আগমনী বার্তা দেশের অন্যান্য অঞ্চলে চলে এসেছে, কিন্তু ঢাকায় আসেনি।