ট্রেন দুর্ঘটনার পেছনে চক্রান্ত আছে কি না, তদন্ত হবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণ দেন। ঢাকা, ১৪ নভেম্বর। ছবি: পিআইডি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণ দেন। ঢাকা, ১৪ নভেম্বর। ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটা ঘটনা ঘটলে দেখা যায় এর পুনরাবৃত্তি ঘটে। সেটা কেন হয়, ভেবে দেখতে হবে। ট্রেন দুর্ঘটনার পেছনে অন্য কোনো দুরভিসন্ধি বা চক্রান্ত আছে কি না, তা তদন্ত করা হবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী আজ বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে এসব কথা বলেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পেঁয়াজ নিয়ে যাতে কোনো সমস্যা না হয় সে বিষয়ে সরকার যথেষ্ট সচেতন আছে। ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। টিসিবির মাধ্যমে এসব পেঁয়াজ জেলা পর্যায়ে পাঠানো হবে।

আজ শেষ হয় পাঁচ কার্যদিবসের এই অধিবেশন। এতে চারটি বিল পাস হয়।

সমাপনী বক্তব্যে দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। ট্রেন দুর্ঘটনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় যে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেখানে চালক কুয়াশার কারণে সিগন্যাল দেখতে পাননি। এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে আছে। আজ রংপুর এক্সপ্রেস সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় দুর্ঘটনা কবলিত হয়েছে। এতে কেউ নিহত হননি। কয়েকজন আহত হয়েছেন। শীত এলে ট্রেন দুর্ঘটনা বেড়ে যায়, এ বিষয়ে কী করা যায় সরকার তা দেখবে।

প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, বিএনপি রেল যোগাযোগ বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে রেল সম্প্রসারিত করছে। পুরোনো রেল লাইনগুলো মেরামত করা হচ্ছে। নতুন লাইন করা হচ্ছে।

এর আগে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ তাঁর বক্তব্যে রেল দুর্ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, যেখানে সাধারণ ট্রেন চালানো যাচ্ছে না, সেখানে পাতাল রেল, মেট্রোরেল কীভাবে চলবে? এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ট্রেনের একটা দুটা দুর্ঘটনা হয়েছে, সে জন্য ট্রেন বন্ধ করে দিতে হবে? গাড়িতেও দুর্ঘটনা হয় সে জন্য কী গাড়ি বন্ধ করে দিতে হবে? তাহলে বিরোধী দলীয় নেতা কি গাড়িতে চড়া বন্ধ করে দেবেন? প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাথা ব্যথার কারণে মাথা কেটে ফেলা যাবে না। দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি নিয়ে সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। এটা নিয়ে কথা হচ্ছে। পেঁয়াজ নাকি ভারতে ৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, এটা একটা প্রদেশে হচ্ছে। সারা ভারতবর্ষে ১০০ রুপিতে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। তারাও বিদেশ থেকে আমদানি করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজ আছে। বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে। দেখা গেছে, পেঁয়াজ পচে গেছে বিক্রি করা হচ্ছে না।

সরকার সচেতন আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, টিসিবির মাধ্যমে কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। মিশর ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। আর কোথায় পাওয়া যায় খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে চলে আসবে। টিসিবি নিয়ে আসবে বিতরণ করবে। ট্রাকে করে এসব পেঁয়াজ জেলায় জেলায় চলে যাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে যাতে ১২ মাস পেঁয়াজ উৎপাদন হয় সে ধরনের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। সেটা বাজারজাত করা হবে। ভবিষ্যতে আর পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় সংসদ এখন জাতির কাছে যথেষ্ট সম্মান ও মর্যাদা পেয়েছে। সংসদে এখন অতীতের মতো খিস্তি খেউড় নেই। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাজেটের আকার বেড়েছে। বরাদ্দ বেড়েছে। গ্রামে আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে। বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশ স্বীকৃতি পেয়েছে। এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধিশালী দেশ হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছে। ৯৪ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। ২৩৪টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুৎ দেওয়া হয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে সব উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হবে।