ডেঙ্গু ছড়িয়েছে শাপলা আবাসিকেও

বিআইটিআইডিতে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।  গতকাল দুপুরে।  কৃষ্ণ চন্দ্র দাস
বিআইটিআইডিতে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। গতকাল দুপুরে। কৃষ্ণ চন্দ্র দাস

চট্টগ্রাম নগরের আকবরশাহ থানাধীন বিশ্ব কলোনিতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বন্ধ হয়নি। বিশ্ব কলোনির পাশাপাশি ডেঙ্গু ছড়িয়েছে পার্শ্ববর্তী শাপলা আবাসিক এলাকায়ও।

গত এক সপ্তাহে এই দুই এলাকা থেকে সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাটস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩০ জন ডেঙ্গু রোগী। গত দুই দিনে (বুধ ও বৃহস্পতিবার) হাসপাতালটিতে ভর্তি হওয়া নয়জন রোগীই শাপলা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা।

অথচ এসব এলাকায় মশানিধনের ক্রাশ প্রোগ্রাম, সচেতনতা কর্মসূচি পালন করেছে কাউন্সিলর ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টার পরও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে না আসায় বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে তাদের।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্রাশ প্রোগ্রাম করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। এডিস মশার লার্ভার উৎপত্তিস্থল রয়ে গেছে। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমছে না। স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতা না বাড়লে ডেঙ্গু রোধ করা কষ্টকর হয়ে যাবে।

বিআইটিআইডি সূত্র জানায়, চলতি বছরের ১৮ জুলাই থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৮৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিয়েছে।

গতকাল দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে ১৫ জন ও নারী ওয়ার্ডে ৯ জন। ভর্তি থাকা সবাই বিশ্বকলোনি ও শাপলা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা। আক্রান্ত রোগীদের মশারির ভেতর রাখা হয়েছে। অনেকের হাতে স্যালাইন লাগানো ছিল।

সেখানে কথা হয় চিকিৎসক নাহিদা সুলতানার সঙ্গে। তিনি বলেন, নগরের এ দুটি এলাকা থেকে প্রতিদিন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে। কেউ চিকিৎসা শেষে ফিরছে। কেউ ভর্তি হচ্ছে। তাঁরাও সাধ্যমতো চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

গতকাল শাপলা আবাসিক এলাকা থেকে হাসপাতালটিতে ভর্তি হন দুই ভাই মো. রাজু (২০) ও মো. রোমান (২৬)। রাজু প্রথম আলোকে বলেন, গত দুই দিন আগে জ্বর আসে। তাঁরা মনে করেছিলেন, ঋতু পরিবর্তনের কারণে ভাইরাস জ্বর হয়েছে। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে দুই ভাই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালে পরীক্ষার পর জানা যায় ডেঙ্গু আক্রান্ত তাঁরা।

ছেলে আলমগীরকে (১৪) হাসপাতালে নিয়ে আসেন রাবেয়া আক্তার। তিনি বলেন, চার দিন ধরে তাঁর ছেলের জ্বর। পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়েছে।

বিআইটিআইডির সহযোগী অধ্যাপক মো. মামুনুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, গত মাসের শেষের দিকে তিনিও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ওই এলাকাগুলোতে জনসচেতনতা চালিয়েছেন। কিন্তু মানুষ সচেতন হচ্ছে না। মানছে না কোনো নিয়ম।

মো. মামুনুর রশীদ আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে দুই দিন বৃষ্টি হওয়ায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। এলাকা দুটি পাহাড়ি হওয়ায় হয়তো কোনো গাছের কোটরে পানি জমে কিংবা যেখানে মানুষের চলাচল কম সেখানে জমে থাকা পানিতে ডেঙ্গু মশার সৃষ্টি হতে পারে।

জানতে চাইলে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা তাঁদের সাধ্যমতো ক্রাশ প্রোগ্রাম করেছেন। পরিষ্কার করেছেন নালা-নর্দমা। সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রচারপত্র বিতরণ ও সভা করেছেন। কিন্তু কিছুতেই বন্ধ করতে পারছেন না ডেঙ্গুর প্রভাব। তিনি দু-এক দিনের মধ্যে আবারও কর্মসূচি হাতে নেবেন বলে জানান।