দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি ঘুষের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ঘুষ লেনদেনের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বের ২০০টি দেশের ২০১৯ সালের চিত্র নিয়ে সম্প্রতি করা একটি আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ঘুষবিরোধী ব্যবসায়িক সংগঠন ট্রেস এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সংগঠনটি তৃতীয় পক্ষ হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করে থাকে।

৫০০ টির বেশি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এই সংগঠনের সদস্য। যারা বিশ্বের পাঁচটি মহাদেশে কাজ করে থাকে। ট্রেস নামের এই প্রতিষ্ঠান কানাডা থেকে নিবন্ধিত।

ট্রেসের এই প্রতিবেদনের শিরোনাম দেওয়া হয়েছে, ‘ট্রেস ব্রাইবারি রিস্ক মেট্রিক্স’। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ঘুষের বিষয়টি বিবেচনা করে এই সূচক তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনের সূচক অনুসারে, যে দেশের পয়েন্ট যত বেশি, সেই দেশের ঝুঁকি তত বেশি। এতে ৭২ পয়েন্ট পেয়ে ১৭৮ তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। গত বছর থেকে চলতি বছর ২ পয়েন্ট বেশি পেয়েছে বাংলাদেশ। এর অর্থ হলো, ঘুষের ঝুঁকি আরও বেড়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মধ্যে ভারত রয়েছে ৭৮তম অবস্থানে। দেশটির পয়েন্ট ৪৮। আর ৬২ পয়েন্ট নিয়ে পাকিস্তানের অবস্থান ১৫৩তম।

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে ভুটান। ৪১ পয়েন্ট নিয়ে দেশটির অবস্থান ৫২তম। ৫৫ পয়েন্ট নিয়ে শ্রীলঙ্কার অবস্থান ১১১তম। ৫৬ পয়েন্ট নিয়ে নেপালের অবস্থান ১১৬তম। আর ৫৭ পয়েন্ট নিয়ে মালদ্বীপ রয়েছে ১২৪তম অবস্থানে। তালিকায় আফগানিস্তানের অবস্থান ১৬৮। দেশটির পয়েন্ট ৬৬।

ঘুষের ঝুঁকি সবচেয়ে কম নিউজিল্যান্ডে। মাত্র ৪ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শীর্ষে রয়েছে দেশটি। আর দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে নরওয়ে ও ডেনমার্ক।

ট্রেসের প্রতিবেদন অনুসারে ২০০টি দেশের মধ্যে ঘুষ লেনদেনের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে সোমালিয়া। এর ওপর ১৯৯তম অবস্থানে রয়েছে দক্ষিণ সুদান। আর ১৯৮তম অবস্থানে রয়েছে উত্তর কোরিয়া।

>

আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ঘুষবিরোধী ব্যবসায়িক সংগঠন ট্রেস এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সংগঠনটি তৃতীয় পক্ষ হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করে থাকে।

সার্বিক এই চিত্রের বাইরে আরও কতকগুলো ছোট ছোট সূচকও প্রকাশ করেছে সংগঠনটি। এগুলোর একটি হলো, সরকারের সঙ্গে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক যোগাযোগ। এর মধ্যে ঘুষ পাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের আগ্রহ, নিয়ন্ত্রণমূলক বাধা এবং সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত। এই সূচকে বাংলাদেশ পেয়েছে ৮৬। এর অর্থ হলো, একটি কাজের জন্য যেকোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সরকারপক্ষের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করতে হয়; সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা অনেক বেশি এবং নিয়ন্ত্রণমূলক বাধাও অনেক বেশি। এই সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে ভুটান।

দ্বিতীয় সূচকের মধ্যে রয়েছে ঘুষ লেনদেনে বাধা এবং ঘুষ প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি। এই সূচকে বাংলাদেশ পেয়েছে ৬৩। অর্থাৎ এই দুই ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের অবস্থান নাজুক। এই সূচকেও দক্ষিণ এশিয়ায় ভালো অবস্থানে ভুটান।

তৃতীয় সূচকের মধ্যে রয়েছে সরকার ও সরকারি সেবার স্বচ্ছতার বিষয়টি। এই সূচকে বাংলাদেশের পয়েন্ট ৬০। বলা হচ্ছে, সরকারের স্বচ্ছতা মধ্যম মানের এবং আর্থিক স্বচ্ছতা খুবই কম বিধায় এত পয়েন্ট পেয়েছে বাংলাদেশ। এই সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে ভারত।

আর চতুর্থ সূচকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি রয়েছে। এই সূচকে বাংলাদেশ পেয়েছে ৬৪ পয়েন্ট। বলা হচ্ছে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার নাজুক অবস্থা ও সরকারি কর্মকাণ্ডে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিত্ব কম বলে বাংলাদেশ এত পয়েন্ট পেয়েছে। এই সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে ভারত।

এই প্রতিবেদন প্রসঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবেদনটি কোন ধরনের গবেষণার মাধ্যমে করা হয়েছে, আমি জানি না। একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন যুক্তরাষ্ট্রে বসে কতটা যৌক্তিক প্রতিবেদন তৈরি করেছে, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। তবে একটা কথা বলতে পারি, আমাদের দেশে ঘুষ আছে, এটা সত্যি। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের চেয়ে আমাদের দেশে ঘুষের প্রবণতা কম।’ তিনি বলেন, ‘দুর্নীতিবিরোধী অভিযান, কাজের ধারায় পদ্ধতিগত পরিবর্তন, দুদকের ফাঁদ মামলার কারণে গত কয়েক বছরে ঘুষ নেওয়ার প্রবণতাও কমেছে। এটা রাতারাতি বন্ধ করা সম্ভব নয়, তবে সামনে এর মাত্রা আরও কমবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।’