মিয়ানমারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর নির্দেশ আইসিসির

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের শিকার হয়ে লাখো রোহিঙ্গা রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। রয়টার্স ফাইল ছবি
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের শিকার হয়ে লাখো রোহিঙ্গা রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। রয়টার্স ফাইল ছবি

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতায় মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে কি না, সে বিষয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের অনুমতি দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। বিচারক ওলগা হেরেরা কারবুসিয়ার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের প্রাক্‌–শুনানি চেম্বার (আদালত) গতকাল বৃহস্পতিবার আইসিসির কৌঁসুলি ফেতু বেনসুদাকে তদন্ত শুরুর নির্দেশ দেন।

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে গাম্বিয়ার মামলা দায়েরের দুই দিনের মাথায় আইসিসি থেকে এই সিদ্ধান্ত এসেছে। ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) গাম্বিয়ার ওই উদ্যোগে সমর্থন দিয়েছে। এ মামলার বিষয়ে আগামী মাসে শুনানি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

এর আগে গত ৪ জুলাই আইসিসির কৌঁসুলি ফেতু বেনসুদা রোহিঙ্গা বিতাড়নের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্তের অনুমতি চেয়ে আইসিসিতে আবেদন করেছিলেন। ওই আবেদনে তিনি বলেন, ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর থেকে রোহিঙ্গা বিতাড়ন শুরু হয়েছিল। সেই সময় থেকে অপরাধের তদন্ত করা হবে। এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে ২০১৭ সালে সহিংসতার মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গাদের বিতাড়নসহ অন্যান্য অমানবিক কর্মকাণ্ড ঘটেছে। এসব কর্মকাণ্ডের ফলে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হওয়ার ভিত্তি রয়েছে।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন–পীড়নের শিকার হয়ে ২০১৬ সালের অক্টোবরের প্রায় ৮৭ হাজার এবং ২০১৭ সালের আগস্টের পর প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

আইসিসির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, চেম্বার আদালত নির্যাতনের শিকার হওয়া কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বা তাদের পক্ষে তদন্তের বিষয়ে অনুরোধ পেয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গারা উল্লেখ করেছেন, ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিই পারে অব্যাহত সহিংসতা আর নির্যাতনের অবসান ঘটাতে।

>

মানবতাবিরোধী অপরাধ হওয়ার ভিত্তি রয়েছে বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রাক্-শুনানি চেম্বারের মত।

চেম্বার আদালত উল্লেখ করেছেন, মিয়ানমার আইসিসির রোম সনদ সই না করলেও বাংলাদেশ ২০১০ সালে সনদটি অনুসমর্থন করেছে। জাতিগত কিংবা ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ব্যাপক কিংবা নিয়মতান্ত্রিক সহিংসতার মাধ্যমে বিতাড়ন (মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে) করা হয়েছে। এই ঘটনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে যে বিবেচনায় নেওয়া যায়, তা বিশ্বাস করার যৌক্তিক ভিত্তি পেয়েছেন চেম্বার আদালত।

পরের ধাপে কী হবে

তদন্তের শুরুতে কৌঁসুলির দপ্তর নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন সূত্র থেকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও নৈর্ব্যক্তিকভাবে প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য–প্রমাণ নিতে থাকবেন। সাক্ষ্য–প্রমাণ সংগ্রহের জন্য যত দিন সম্ভব তদন্ত চলবে। পর্যাপ্ত সাক্ষ্য–প্রমাণ সংগ্রহ শেষে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেলে কৌঁসুলি প্রাক্‌–শুনানি আদালতের কাছে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আদালতে হাজিরের জন্য সমন জারি বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জরি বা গ্রেপ্তারের জন্য অনুরোধ জানাতে পারবেন। আইসিসির চেম্বার আদালতের ওই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকরের দায়িত্ব রাষ্ট্রের ওপর পড়ে। রোম সনদে সই করা রাষ্ট্রের জন্য আইসিসিকে পুরোপুরি সহযোগিতার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অন্য রাষ্ট্রকেও সহযোগিতা করার জন্য আইসিসি অনুরোধ জানাতে পারে। এ ক্ষেত্রে আইসিসিকে সহযোগিতা করা ওই রাষ্ট্রের একান্ত নিজস্ব বিষয়।

যেভাবে তদন্তের শুরু

রোহিঙ্গাদের ওপর মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে কি না, তা নিয়ে আইনি মত চেয়ে ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল প্রাক্-শুনানি আদালতে আবেদন জানান আইসিসির কৌঁসুলি ফেতু বেনসুদা। এরপর ওই বছরের জুনে আইসিসির অনুরোধে সাড়া দিয়ে এ বিষয়ে পর্যবেক্ষণ পাঠায় বাংলাদেশ। কিন্তু মিয়ানমার গত বছরের আগস্টে জানিয়ে দেয়, আইসিসির এ নিয়ে কাজ করার এখতিয়ার নেই। কারণ, মিয়ানমার রোম সনদে সই করেনি। তাই আইসিসিতে কোনো পর্যবেক্ষণ পাঠাবে না মিয়ানমার।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালের জুলাইয়ে ইতালিতে এক কূটনৈতিক সম্মেলনে রোম সনদ সই হয়। এই সনদ আদালতের কর্মকাণ্ড, কাজের পরিধি ও কাঠামো ঠিক করে দিয়েছে।