চরম সংকটে চার পরিবার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত সোহেল মিয়াকে ওষুধ খাইয়ে দিচ্ছেন তাঁর ভাই। গতকাল দুপুরে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে।  ছবি: প্রথম আলো
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত সোহেল মিয়াকে ওষুধ খাইয়ে দিচ্ছেন তাঁর ভাই। গতকাল দুপুরে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে। ছবি: প্রথম আলো

শারীরিক যন্ত্রণায় ছটফট করছেন সুরাইয়া খাতুন (৬৫)। অসহায় চোখে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে অঝোরে কাঁদছেন বৃদ্ধ আবুল হোসেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) গিয়ে চোখ আটকায় এমন দৃশ্যে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার মন্দবাগ রেলস্টেশনের বাইরে গত সোমবার গভীর রাতের ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত হন সুরাইয়া। ওই ঘটনায় আহত হয়েছে তাঁর পরিবারের আরও তিন সদস্য।

আবুল হোসেনের পরিবারসহ ৪টি পরিবারের অনেকে ওই দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি। একসঙ্গে পরিবারের এতজন সদস্য হাসপাতালে ভর্তি থাকায় চরম সংকটে আছে পরিবারগুলো।

একই পরিবারের চারজন হাসপাতালে ভর্তি। এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে—এখন এভাবেই দিন কাটছে আবুল হোসেনের। জানালেন, তাঁর নাতনি শাহিদা আক্তার সুমিও (২০) এই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। নাতি ইমন (১৮) পঙ্গু হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ভর্তি। আরেক নাতিন মীমকে (৬) ভর্তি করা হয়েছে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)।

চোখ মুছতে মুছতে আবুল হোসেন বলেন, ‘চোখের সামনে স্ত্রী ও নাতি–নাতনিরা এমন কষ্ট করছে। আমি আর সইতে পারছি না।’

পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি আছেন একই দুর্ঘটনায় আহত আবুল কালাম (৫২)। গতকাল দুপুরে দেখা যায়, তিনি ঘুমাচ্ছেন। স্ত্রী বেনু আরা তাঁর পাশে বসে নীরবে চোখ মুচছেন। নানা অনিশ্চয়তা ভর করেছে তাঁকে। বললেন, ‘জানি না কবে বাড়ি ফিরতে পারব।’ বেনুর প্রশ্ন, ‘উনি কি হাঁটতে পারবেন আপা?’

গতকাল দেখা যায়, হাসপাতালের শয্যায় আহত সোহেল মিয়ার (৩৫) মুখে ভাত তুলে দিচ্ছেন মা। সোহেল মিয়ার স্ত্রী–শাশুড়িও একই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। শাশুড়িকে ভর্তি করা হয়েছে সিএমইচে।

দুর্ঘটনায় মারা গেছে সোহেল মিয়ার দুই বছরের মেয়ে সোহা।মেয়েকে হারিয়ে পাগলপ্রায় সোহেলের স্ত্রীনাজমা বেগম। তিনি নিজেও দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। তাঁরপাশে থাকা ভাই বললেন, ‘নাজমা বেগম ঘুমের মধ্যেও সোহা কই, সোহা কই বলে কান্না করছেন।’

এদিকে গত বুধবার সন্ধ্যায় ভর্তি হওয়া রোজিনা বেগমের (৫০) পরিবারও সংকটে। পরিবারের সবাই শ্রীমঙ্গলে গিয়েছিলেন বিয়ের অনুষ্ঠানে। ফেরার পথে ওই দুর্ঘটনায় মেয়ে ফারজানাকে (১৬) হারিয়েছেন রোজিনা। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ওই পরিবারের আরও তিন সদস্য। তাঁরাও হাসপাতালে ভর্তি। তাঁদের বাড়ি চাঁদপুর সদরের বালিয়া ইউনিয়নের বালিয়া গ্রামে।