সৌদি থেকে দেশে ফিরেছেন সেই সুমি

চলতি মাসে দেড় হাজারের বেশি বাংলাদেশি সৌদি থেকে দেশে ফিরেছেন। প্রথম আলো ফাইল ছবি
চলতি মাসে দেড় হাজারের বেশি বাংলাদেশি সৌদি থেকে দেশে ফিরেছেন। প্রথম আলো ফাইল ছবি

সৌদি আরবে কর্মী হিসেবে যাওয়া সুমি আক্তার জীবন বাঁচানোর আকুতি জানিয়েছিলেন। তাঁর সেই আকুতির ভিডিও ভাইরাল হয়। সমালোচনার ঝড় ওঠে। তাঁকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি ওঠে। অবশেষে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছেন সুমি।

আজ শুক্রবার সকাল সোয়া সাতটার দিকে এয়ার এরাবিয়ার একটি ফ্লাইটে সুমি ঢাকায় আসেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছেন আরও ৮৬ জন বাংলাদেশি কর্মী।

সুমিকে বিমানবন্দরে গ্রহণ করেন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম। প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপস্থিত থেকে সুমির বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদনে সহায়তা করেন।

বিমানবন্দরে সাংবাদিকেরা সুমির সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাননি।

সুমিকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় গাড়িতে করে পঞ্চগড়ের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়।

সুমির বাড়ি পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার বৈরাতি সেনপাড়া গ্রামে। বোর্ড জানায়, সুমিকে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে তাঁর বাবা-মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম সূত্র জানায়, ৩০ মে একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে সৌদি আরবে যান সুমি। সেখানে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাঁচার আকুতি জানান তিনি। সুমির আকুতির ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। পরে সুমির স্বামী নুরুল ইসলাম রাজধানীর পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

ভিডিওতে সুমি বলেন, ‘ওরা আমারে মাইরা ফালাইব। আমারে দেশে ফিরাইয়া নিয়া যান। আমি আমার সন্তান ও পরিবারের কাছে ফিরতে চাই। আমাকে আমার পরিবারের কাছে নিয়ে যান। আর কিছুদিন থাকলে আমি মরে যাব।’

গত ২২ অক্টোবর জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে লিখিত অভিযোগ করেন সুমির স্বামী নুরুল ইসলাম। সুমিকে নিরাপদে দেশে ফেরাতে গত ২৭ অক্টোবর ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামে আবেদন করেন নুরুল ইসলাম। ব্র্যাকের সহায়তায় গত ২৯ অক্টোবর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়। পরে জেদ্দা কনস্যুলেটের হস্তক্ষেপে সুমিকে নিয়োগকর্তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।

সুমির নিয়োগকর্তা ২২ হাজার সৌদি রিয়াল দাবি করেন। অর্থ পরিশোধ না করা পর্যন্ত তাঁকে দেশে ফিরতে দেওয়া হবে না বলে জানান। পরে নাজরান শহরের শ্রম আদালতে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়।

সুমিকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের অর্থায়নে দূতাবাসের সহযোগিতায় দেশে ফেরত আনা হয়।

ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল ইসলাম বলেন, সৌদি আরবে সুমির মতো আরও কতজন বিপদে আছেন, তা আমরা জানি না। সৌদি আরবে নারী কর্মীদের অধিকাংশ ক্ষেত্রে মুঠোফোন ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না। ফলে বিপদে পড়লও তাঁরা কাউকে জানাতে পারেন না। অথচ শুধু যদি মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দেওয়া হতো, পরিস্থিতি বদলে যেত।’

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১১টার দিকে সৌদি এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজে সৌদি থেকে দেশে ফিরেছেন আরও ৮৬ বাংলাদেশি। বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে ১ হাজার ৬৪৭ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন।