সেই আমবাগানে হচ্ছে পাখির স্থায়ী বাসা

বাগানে কয়েক হাজার পাখির বাসা রয়েছে। ছবি: প্রথম আলো
বাগানে কয়েক হাজার পাখির বাসা রয়েছে। ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের সেই আমবাগানে পাখির স্থায়ী আবাসন গড়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে রাজশাহীর জেলা প্রশাসককে এই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এ জন্য জমি অধিগ্রহণ ও গাছের মূল্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। আগামী দুই-একদিনের মধ্যেই এই প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের আমবাগানে শামুকখোল পাখিরা বাসা বেঁধেছে। গত চার বছর ধরে তারা এই বাগানে বর্ষার শেষে এসে বাচ্চা ফোটায়। শীতের শুরুতে বাচ্চারা উড়তে শিখলে বাচ্চাদের নিয়ে চলে যায়। এই বাগানে পাখিদের জন্য স্থায়ীভাবে অভয়ারণ্য করে দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে এই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

এর আগে ৫ নভেম্বর প্রতি বছর পাখির বাসার জন্য বছরে ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা বরাদ্দ চেয়ে জেলা প্রশাসক মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় থেকে গত বুধবার রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কাছে ফের এই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক জানান, গত বুধবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। পাখিদের জন্য যাতে স্থায়ীভাবে অভয়ারণ্য করা যায় এ জন্য জমি ও গাছের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় কী পরিমাণ হতে পারে তা নির্ধারণ করে একটি প্রতিবেদন পাঠাতে বলেছেন।

এর আগে বাঘা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান প্রথম আলোকে বলেছিলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তিনি (শফিউল্লাহ সুলতান) ও বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীন রেজা বাগানে গিয়ে জরিপ করে দেখেছেন ৩৮টি আমগাছে পাখিরা বাসা বেঁধেছে। তাঁরা এই গাছগুলোর আমের সম্ভাব্য দাম ও পরিচর্যার ব্যয় নিরূপণ করেছেন। তাদের হিসাব অনুযায়ী প্রতি বছর ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা ক্ষতি হতে পারে। কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেছিলেন, এই পাখিরা প্রতি বছর একই গাছে বাসা বাঁধে না। কয়েক বছর আগে এরা রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা কালুহাটি গ্রামের বাসা বেঁধেছিল। সেখান থেকে চার বছর আগে এই গ্রামে এসেছে। এখান থেকে আগামী বছর আবার অন্য জায়গায়ও যেতে পারে। এ জন্য অভয়ারণ্য ঘোষণা করা ঠিক হবে কি না সেটা বিবেচনায় রাখা উচিত।

তবে বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীন রেজা আজ শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে তারা নির্দেশনা পেয়েছেন। এ জন্য অন্তত ১০ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। ৩৮টি আমগাছের মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। তারা এ কাজ শুরু করে দিয়েছেন। আগামী রবি অথবা সোমবারের মধ্যে তারা এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠাবেন। তিনি মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন।

প্রতি বছরের মতো এবারও এই বাগানে পাখিরা বাসা বেঁধে বাচ্চা ফুটিয়েছে। বাচ্চারা এখনো উড়তে শিখেনি। কিন্তু আমবাগানের ইজারাদার এ সময় বাগানের পরিচর্যা করতে চান। তিনি বাসা ভেঙে আমগাছ খালি করতে চান। গত ২৯ অক্টোবর তিনি একটি গাছের কিছু বাসা ভেঙেও দেন। স্থানীয় পাখিপ্রেমী কিছু মানুষ তাঁকে বাসা না ভাঙার জন্য অনুরোধ করেন। অন্তত যত দিন বাচ্চারা উড়তে না শেখে। তাদের অনুরোধে তিনি পাখিদের বাসা ছাড়ার জন্য ১৫ দিন সময় বেঁধে দেন। ১৫ দিনের মধ্যে বাসা না ছাড়লে পাখিদের বাসা ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেন। ওই দিন রাতেই প্রথম আলোর অনলাইনে ‘পাখিদের বাসা ছাড়তে সময় দেওয়া হলো ১৫ দিন।’  শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরের দিন ৩০ অক্টোবর প্রথম আলোতে ‘পাখিদের উচ্ছেদের ১৫ দিন সময় বাগান মালিকের’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিষয়টি আদালতের নজরে এনে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার আরজি জানান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রজ্ঞা পারমিতা রায়।

আদালত স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ এক আদেশে বলেন, কেন ওই এলাকাকে পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। ঘোষিত আদেশে বলা হয়েছে এলাকাটি অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হলে বাগান মালিক ও বাগানের ইজারাদারের ক্ষতির সম্ভাব্য পরিমাণ নিরূপণ করে ৪০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে রাজশাহী জেলা প্রশাসক ও বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এদিকে প্রথম আলোর প্রতিবেদন দেখে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ র‌্যাব-৫ এর অধিনায়ক মাহফুজুর রহমানকে পাখিদের দায়দায়িত্ব নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। র‌্যাব-৫ এর অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান বাগানে গিয়ে সে ঘোষণাও দিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গত বুধবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কৃষি বিভাগ এই দায়িত্ব নিয়েছে। তারা দায়িত্ব না নিলে র‌্যাব এই ক্ষতিপূরণ দিত।