রাজউকের নির্দেশের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে যাবে আসক

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ভ্রাম্যমাণ আদালত গতকাল বৃহস্পতিবার মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রকে (আসক) ২ লাখ টাকা জরিমানা ও দুই মাসের মধ্যে বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দেয়। রাজউকের ভ্রাম্যমাণ আদালতের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে আসক। আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর লালমাটিয়ায় আসকের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়।

আসকের অভিযোগ, রাজউকের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করে আইন লঙ্ঘন করেছেন। জোর করে আদালতের রায়ে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে।

আবাসিক ভবনে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার অপরাধে রাজউক এই অভিযান পরিচালনা করেছে। তবে আসকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে আসকের মতো ৩৩ বছরের পুরোনো মানবাধিকার সংস্থার অফিসে অভিযান চালিয়েছে রাজউক। কারণ, লালমাটিয়া এলাকায় অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের (এনজিও) কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও বহু বেসরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থাকলেও সেখানে অভিযান চালায়নি রাজউক।

সংবাদ সম্মেলনে আসকের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা বলেন, ইমারত আইন ১৯৫২-এর ৩ (ক) ধারায় আসককে ২ লাখ টাকা জরিমানা ও দুই মাসের মধ্যে ভবন ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। অথচ এই আইনটি ভবন নির্মাণসংক্রান্ত বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। আসক কোনোভাবেই ভবন নির্মাণের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, কেবল ভবনটি ভাড়াটে হিসেবে ব্যবহার করছে। সে কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উত্থাপিত অভিযোগ আসক অস্বীকার করলে ম্যাজিস্ট্রেট অফিস তালাবন্ধ ও গ্রেপ্তারের কথা বলেন।

নির্বাহী পরিচালক বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের আইন অনুযায়ী অভিযোগকারী তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করলে বিচারিক আদালতে যাওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। এসব যুক্তি না মেনে কর্মীদের গ্রেপ্তার ও অফিস সিলগালার হুমকি দিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দেওয়া অভিযোগে সই করতে বাধ্য করা হয়।

শীপা হাফিজা বলেন, লালমাটিয়া এলাকায় অনেক বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন, এনজিও, এমনকি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। রাজউক তাদের কারও বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেনি। বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যেই আসকের বিরুদ্ধে রাজউক অভিযান পরিচালনা করেছে বলেও তিনি অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনটির সমালোচনা করে আসছিলাম।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আসকের নির্বাহী পরিষদের মহাসচিব তাহমিনা রহমান বলেন, ‘আইন লঙ্ঘন করে আসককে জরিমানা করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অভিযানের ধরন দেখে মনে হচ্ছে এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তবে কী উদ্দেশ্য, সেটি আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়।’

১৯৮৬ সালে আসক প্রতিষ্ঠা করেন দেশের গণ্যমান্য কিছু ব্যক্তি। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ, বিশিষ্ট আইনজীবী আমীর-উল ইসলাম, প্রয়াত বিচারপতি কে এম সোবহান, হামিদা হোসেন প্রমুখ। প্রতিষ্ঠানটি দেশের মানবাধিকার, সুশাসন নিয়ে মাসিক, ত্রৈমাসিক, বার্ষিক তথ্য প্রকাশ করে থাকে। এ ছাড়া মানবাধিকারসহ নারী, শিশু ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে।