সম্রাটসহ ১২ প্রভাবশালীর বিচার শুরু হচ্ছে শিগগির

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

ক্যাসিনোবিরোধী ও শুদ্ধি অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ১০ জনসহ ১২ প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করে বিচার শুরু হবে। ইতিমধ্যে চারটি মামলায় চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। বাকি মামলার তদন্তও শিগগিরই শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে সবচেয়ে আলোচিত নেতা হলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। গত ৬ অক্টোবর ঘনিষ্ঠ সহযোগী আরমানসহ তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। সম্রাটের বিরুদ্ধে রমনা থানায় অস্ত্র ও মাদকের পৃথক দুটি মামলা হয়। এক মাসের মাথায় ৬ নভেম্বর অস্ত্র মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় র‍্যাব। তাঁর মামলাটিও মহানগর দায়রা আদালতে বদলি করা হয়েছে। শিগগিরই বিচার শুরু হবে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে আদালতের সংখ্যাও বাড়ানো হচ্ছে।

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হয় গত ১৮ সেপ্টেম্বর। ওই দিন রাজধানীর চারটি ক্লাবে অভিযান চালিয়ে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। ক্লাবগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ জুয়ার সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় যুবলীগ, কৃষক লীগ, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ১০ নেতা–কর্মীকে। অভিযান আঁচ করতে পেরে দুজন পালিয়ে যান। গ্রেপ্তার করা এসব নেতাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর এই অভিযানের পরিধি নিয়ে নানা মহলে শঙ্কা ছিল। অনেকে ধরে নিয়েছিলেন, অভিযান আর চলবে না। তবে বৃহস্পতিবার সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জেলা–উপজেলা পর্যন্ত অভিযান চলবে।

র‍্যাব ও পুলিশ সূত্র জানায়, চলমান অভিযানের ৪৯ দিনের মধ্যে ১০ প্রভাবশালীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুজন পালিয়ে গেছেন। এই ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৩৫টি। এর মধ্যে অস্ত্র মামলা ৭টি, মাদকের ১০টি, অর্থ পাচারের ৬টি, দুর্নীতির ১১ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা মামলা আছে ১টি। এসব মামলার মধ্যে চারটি অস্ত্র মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দেওয়া হয়েছে।

ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি তাপস কুমার পাল প্রথম আলোকে বলেন, অস্ত্র মামলায় ঢাকা মহানগর যুবলীগের (দক্ষিণ) বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, ঠিকাদার ও কথিত যুবলীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া শামীম (জি কে শামীম) ও সম্রাটের বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগপত্র ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে এসেছে।

১২ নভেম্বর অস্ত্র মামলায় কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের চেয়ারম্যান শফিকুল আলমের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে গত মঙ্গলবার এই অভিযোগপত্র উপস্থাপন করা হয়।

>

গ্রেপ্তার করা প্রভাবশালী ১০, পলাতক ২, মোট মামলা ৩৫টি
আদালতে অভিযোগপত্র জমা ৪টি
বাকি মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করা হচ্ছে

খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ক্যাসিনো ব্যবসা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, অর্থ পাচার ও অবৈধ অস্ত্র রাখার অভিযোগ আনে র‍্যাব। গুলশান থানায় তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও অর্থ পাচার আইনে তিনটি মামলা হয়। পরবর্তী সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুদক।

র‍্যাব জানায়, চলমান অভিযানে গ্রেপ্তার ১০ জনের মধ্যে ৭ জনের নামে অস্ত্র মামলা করেছে র‍্যাব। তাঁদের মধ্যে সম্রাট, খালেদ, শামীম ও শফিকুলের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কাউন্সিল তারেকুজ্জামান, হাবিবুর রহমান, ময়নুল হকের বিরুদ্ধে খুব শিগগির আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে। র‍্যাব যে তিনটি মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছে, তাতে অস্ত্রের ব্যালেস্টিক পরীক্ষার প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।

র‍্যাবের সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) মিজানুর রহমান বলেন, চলমান অভিযানে গ্রেপ্তার যেসব মামলার তদন্ত র‍্যাব করছে, সেগুলো দ্রুত তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন জমা হচ্ছে।

আদালত সূত্র জানায়, চলমান শুদ্ধি অভিযানে মামলা হওয়া প্রভাবশালী ১২ জনের মধ্যে ৯ জনের নামে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দিয়েছে র‍্যাব।
র‍্যাব সূত্র বলছে, মাদক মামলাতেও দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

মাদক ও অস্ত্র ছাড়াও ১২ প্রভাবশালীর মধ্যে ৬ জনের নামে অর্থ পাচারের অভিযোগ এনেছে র‍্যাব। র‍্যাবের করা এসব মামলার তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তদন্তের প্রয়োজনে ইতিমধ্যে শামীম, খালেদ, হাবিবুর ও সেলিমকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিআইডি। জব্দ করা হয়েছে তাঁদের ব্যাংক হিসাবও। অর্থ পাচার মামলার আসামি আওয়ামী লীগ নেতা দুই ভাই এনামুল হক ভূঁইয়া ও রুপন ভূঁইয়ার ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। তবে দুজনই শুরু থেকে পলাতক।
তদন্ত তদারক কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফারুক ও নাজিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, শিগগিরই আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

দুদকের ১১ মামলা
র‍্যাবের শুদ্ধি অভিযানে গ্রেপ্তার কিংবা মামলায় যাঁরা পলাতক আসামি, যাঁদের নামে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ, তাঁদের মধ্যে ১১ জনের নামে ইতিমধ্যে মামলা করেছে দুদক। শামীম, খালেদ ও লোকমানকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে দুদক। যুবলীগের সম্রাট, এনামুল হক, কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান, হাবিবুর রহমান, শ্রমিক লীগের শফিকুল, সেলিম, এনামুল ও রুপনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে মামলা করেছে সংস্থাটি।

তদন্ত প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত দুদকের কর্মকর্তারাও বলছেন, যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

ঢাকা মহানগর আদালতের প্রধান সরকারি কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ক্যাসিনো ব্যবসাসহ নানা অভিযোগে সম্প্রতি যে কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে বেশির ভাগ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দিচ্ছে র‍্যাব। তাঁর কাছ থেকে ইতিমধ্যে কয়েকজনের মামলায় সাক্ষ্য-স্মারকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, প্রভাবশালী এসব ব্যক্তির মামলার তদন্ত ও বিচার দ্রুততম সময়ের মধ্যে করা উচিত। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হলেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের যে দৃঢ় অবস্থান, তা আরও পরিষ্কার হবে।