ক্লাস পার্টির বিরিয়ানি খেয়ে অসুস্থ ওরা

ডক্টরস পয়েন্টে চিকিৎসাধীন এক শিশু। ছবি: প্রথম আলো
ডক্টরস পয়েন্টে চিকিৎসাধীন এক শিশু। ছবি: প্রথম আলো

শরীয়তপুর জেলা শহরের এসডিএস একাডেমিতে ক্লাস পার্টির বিরিয়ানি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। কেউ কেউ বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন আবার কেউ কেউ চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে ফিরে গেছেন। অসুস্থ শিক্ষার্থীদের আগামীকাল রোববার শুরু হতে যাওয়া প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় বসার কথা।

এসডিএস একাডেমি সূত্র জানায়, জেলা শহরের এসডিএস একাডেমির ৩২ জন শিক্ষার্থী প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা ক্লাস পার্টির আয়োজন করে। সেখানে দুপুরের খাবার হিসেবে বিরিয়ানি খাওয়ানো হয়। এই বিরিয়ানি আনা হয় শহরের রাজগঞ্জ ব্রিজ এলাকার মদিনা বিরিয়ানি নামে এক দোকান থেকে। ওই বিরিয়ানি খাওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাত থেকে শিশুরা অসুস্থ হতে থাকে। তাদের পাতলা পায়খানা, জ্বর, বমি ও শরীর ব্যথা হতে থাকে। গতকাল শুক্রবার ও আজ শনিবার এসব শিশুকে সদর হাসপাতাল ও শহরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অনেককে স্যালাইন দিতে দেখা গেছে।

জেলা পরিষদের কর্মকর্তা রনজিৎ সাহার বলেন, তাঁর ছেলে ক্লাস পার্টির বিরিয়ানি খেয়ে গতকাল দুপুরের পর সে অসুস্থ হয়ে পরে। পরীক্ষার পড়াশোনায় ব্যাঘাত হবে ভেবে তাকে বাড়িতে রেখেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু সে বেশি অসুস্থ হয়ে পরলে তাকে আজ শহরের ডক্টর পয়েন্টে আনা হয়। তাকে ওষুধের সঙ্গে স্যালাইন পুশ করা হয়।

উদ্বিগ্ন এই বাবা বলেন, সকালে পরীক্ষা। এখন প্রস্তুতি নেওয়ার সময়। এমন সময় ছেলেটা শারীরিক ও মানসিক ট্রমায় পরে গেল। জানি না পরীক্ষাটা কেমন হবে।

এসডিএস একাডেমির হিসাবরক্ষক বিউটি আক্তার, তাঁর মা হামিদা বেগম ও ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র বাসিত হোসেন বিরিয়ানি খেয়ে অসুস্থ হয়ে এখন শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

বিউটি বেগম বলেন, ‘পেট ব্যথা,পাতলা পায়খানা,বমি ও জ্বর হচ্ছে। জানি না বিরিয়ানির মধ্যে কী ছিল। কয় দিন হাসপাতালে থাকতে হয় আল্লাহই জানেন।’

সদর হাসপাতালের চিকিৎসক নুরুল আমিন বলেন, রোগীদের লক্ষণ দেখে মনে হচ্ছে খাবারে বিষাক্ত কিছু ছিল। সেরে উঠতে দুই তিন দিন লাগবে। এরই মধ্যে সেই বিরিয়ানি খাওয়া লোকজনের মধ্য দুই-তিনজন চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে। আর এখন তাঁর অধীনে চারজন চিকিৎসাধীন আছেন।

বিসমিল্লাহ বিরিয়ানির মালিক মুকিম হাওলাদার আজ তাঁর দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যান। তাঁকে পৌরবাস টার্মিনালে খুঁজে পাওয়া যায়। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এক সঙ্গে ১০০ জনের বিরিয়ানি রান্না করেছি। এসডিএস নিয়েছে ৬৫ জনের খাবার। অন্য কারও কোনো সমস্যা হয়নি। এসডিএসের বিরিয়ানিতে কী হয়েছে আমি বলতে পারব না। ভয়ে দোকান বন্ধ করে রেখেছি।’

এসডিএস একাডেমির অধ্যক্ষ সিরাজুল হক বলেন, ‘ওই বিরিয়ানি খেয়ে শিশুদের সঙ্গে আমিও অসুস্থ হয়ে পরেছি। ওই বিরিয়ানিতে বিষাক্ত কিছু ছিল। বিষয়টি আমি মৌখিকভাবে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে জানিয়েছি।’

জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। আর ওই হোটেলের খাবারও পরীক্ষা করা হবে। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।