ছেলেকে মাদক ছাড়াতে গিয়ে খুন হলেন বাবা?

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় ব্যবসায়ী নিখিল বিশ্বাস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার যুবক রিপন বিশ্বাস। গতকাল সকালে জুড়ী থানায়। ছবি: প্রথম আলো
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় ব্যবসায়ী নিখিল বিশ্বাস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার যুবক রিপন বিশ্বাস। গতকাল সকালে জুড়ী থানায়। ছবি: প্রথম আলো

মৌলভীবাজারের জুড়ীতে ব্যবসায়ী নিখিল বিশ্বাস (৫০) হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে রিপন বিশ্বাস (২৫) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ বলছে, নিখিলের ছেলে অর্জুনের সঙ্গে রিপনের বন্ধুত্ব ছিল। রিপনের কারণে অর্জুন মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। এ নিয়ে বকাবকি করায় নিখিলকে হত্যা করেন রিপন।

নিহত নিখিলের বাড়ি উপজেলার পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নের বিনন্দপুর গ্রামে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় স্থানীয় একটি পাহাড়ি ছড়ায় তাঁর লাশ পাওয়া যায়। ওই দিন গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে একই এলাকার বাসিন্দা রিপনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ব্যাপারে জুড়ী থানায় হত্যা মামলা হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিখিল পান-সুপারি ও কলার ব্যবসা করেন। তাঁদের বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে একটি পাহাড়ি ছড়া আছে। এটির নাম হরমাছড়া। শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে ওই ছড়ার আশপাশের কিছু মানুষ ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ বলে চিৎকার শুনতে পান। একপর্যায়ে সেখানে গিয়ে ছড়ার পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় নিখিলের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। এ সময় কালো রঙের জ্যাকেট পরা এক ব্যক্তিকে দৌড়ে যেতেও দেখেন তাঁরা। এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। ওই দিন রাতেই নিখিলের স্ত্রী মিরা রানী বিশ্বাস বাদী হয়ে মামলা করেন। পরে জ্যাকেটের সূত্র ধরে ও নিহত ব্যবসায়ীর স্বজনদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জুড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুপ্রিয় নন্দীর নেতৃত্বে একদল পুলিশ রিপনকে তাঁর বাড়ি থেকে আটক করে। এ সময় জ্যাকেটসহ তাঁর বালিশের নিচ থেকে ‘হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত’ ধারালো দা জব্দ করা হয়।

রিপনের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে জুড়ী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম গতকাল সকালে সাংবাদিকদের বলেন, নিখিলের ছেলে অর্জুন বিশ্বাসের সঙ্গে সম্প্রতি রিপনের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। রিপন দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত। তাঁর সঙ্গ পেয়ে অর্জুনও মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। স্বজনেরা তাঁকে (অর্জুন) এ পথ থেকে ফেরাতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হন। শুক্রবার বিকেলে পার্শ্ববর্তী গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের কুচাই এলাকায় রিপনের সঙ্গে নিখিলের দেখা হয়। এ সময় নিখিল রিপনকে তাঁর ছেলের সঙ্গ ছাড়তে বলেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রিপন বাড়ি ফেরার পথে নিখিলকে দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যান।

পরিদর্শক আমিনুল বলেন, ছেলেকে মাদক ছাড়ানোর জের ধরেই নিখিল নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন। তাঁর স্ত্রীর করা মামলায় রিপনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে মৌলভীবাজারের কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য নিখিলের লাশ মৌলভীবাজারের ২৫০ শয্যা হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।