নিশ্চিত হয়নি নাগরিক সুবিধা

কালীগঞ্জ উপজেলা শহরে ঢোকার মূল রাস্তা এটি। খানাখন্দে ভরা সড়কে যানবাহন চলছে হেলেদুলে। সম্প্রতি তোলা।  ছবি: প্রথম আলো
কালীগঞ্জ উপজেলা শহরে ঢোকার মূল রাস্তা এটি। খানাখন্দে ভরা সড়কে যানবাহন চলছে হেলেদুলে। সম্প্রতি তোলা। ছবি: প্রথম আলো

গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানা থেকে ঘোড়াশাল সড়ক ধরে কিছুদূর এগোলেই কালীগঞ্জ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বালিগাঁও মধ্যপাড়া এলাকা। এখানে সড়কের পাশে একখণ্ড জমিতে সবজি চাষ করে সংসার চালাতেন স্থানীয় সিদ্দিকুর রহমান। কিন্তু গত সাত-আট বছর সেখানে আর ফসল চাষ করা যাচ্ছে না। বৃষ্টি হলে পানি জমে থাকে, সব ফসল মরে যায়। তাই বিকল্প হিসেবে কলাগাছ লাগিয়েছেন। কিন্তু বর্ষায় পানি জমে কলাগাছগুলোতেও পচন ধরে।

সিদ্দিকুর বলেন, ‘ড্রেন (নালা) না থাকায় এই পরিণতি। বৃষ্টি হলে টানা দু-তিন দিন পানি জমে থাকে। এ কারণে কোনো ফসল চাষ করা যাচ্ছে না। আমরা পৌরসভার বাসিন্দা। নিয়মিত ট্যাক্স দিই। অথচ পৌরসভার কোনো সুবিধা পাচ্ছি না। বৃষ্টি হলেই এই এলাকার ৩০০ থেকে ৪০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে যায়। এ নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই।’

কালীগঞ্জ পৌরসভা গঠিত হয়েছে প্রায় ১০ বছর আগে। কিন্তু এখনো পৌরবাসীর উন্নয়নের আশা পূরণ হয়নি। নামে পৌরসভা হলেও এখানকার বেশির ভাগ রাস্তা এখনো কাঁচা, ভাঙাচোরা। বৃষ্টি হলেই পানি জমে। নেই ফুটপাত, সড়কবাতি, নালা-নর্দমা এবং বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা। এখনো পানির একমাত্র ভরসা টিউবওয়েল। গ্যাস নেই, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ-সংযোগ নেই। মিলছে না ন্যূনতম নাগরিক সুবিধাগুলো।

পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বড়নগর এলাকার বাসিন্দা মো. আক্তার হোসেন বলেন, ‘পৌরসভা হওয়ার পর ভেবেছিলাম বিভিন্নমুখী উন্নয়ন হবে। পৌরসভার সুবিধাগুলো পাওয়া যাবে। কিন্তু এসবের কিছুই হয়নি। যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকে। সড়কবাতি না থাকায় রাতে চলাচলেও ব্যাপক সমস্যা হয়। কিন্তু এসব নিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই।’

কালীগঞ্জ উপজেলা শহর, ৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডসহ অন্যান্য এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এখনো অধিকাংশ সড়ক কাঁচা। কোনো কোনো সড়কের পিচঢালাই উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে উপজেলা শহরে ঢুকতেই কালীগঞ্জ আরআরএন পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠের সামনে থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দিকে যেতে মূল সড়কটি বেহাল। এটি খানাখন্দে ভরা। ধুলাবালু উড়ছে। সাধারণ মানুষ পথ চলছে নাকমুখ চেপে। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বড়নগর সড়ক ধরে দরগা বাজারের দিকে যাওয়ার সড়কটিও বেহাল। এখানেও বড় বড় গর্ত। যানবাহন ও মানুষ চলাচলে ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চৌড়া ‘শাহকারফরমা’ মা ও শিশুস্বাস্থ্য কল্যাণ কেন্দ্রের সামনে থেকে উপজেলা সদরের দিকে যাওয়ার সড়কটিও ভাঙা। কাজী অলক নামের এক স্থানীয় দোকানি বলেন, ভাঙা রাস্তার কারণে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ে রোগীরা। বিশেষ করে বৃষ্টির দিন চলাচলের উপায় থাকে না। একই চিত্র পৌরসভার অন্যান্য এলাকায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পৌরসভায় মোট গৃহ আছে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার। এর মধ্যে পানির সংযোগ নেই কোথাও। পৌরবাসীর একমাত্র ভরসা টিউবওয়েল বা সাবমার্সিবল পাম্প। তা ছাড়া পৌরসভার নিজস্ব কোনো খেলার মাঠ নেই, পার্ক নেই। নেই চিত্তবিনোদনের বিশেষ কোনো ব্যবস্থা। উপজেলা শহরে কালীগঞ্জ আরআরএন পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের একটি খেলার মাঠ আছে। পৌর এলাকার শিশু-কিশোর ও শিক্ষার্থীরা এখানে খেলাধুলা করে।

এসব বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে পৌরসভার বর্তমান মেয়র মো. লুৎফর রহমান মুঠোফোনে কথা বলতে রাজি হননি।

এদিকে পৌরবাসীর নাগরিক সুবিধা না পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে কথা হয় নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যেহেতু এটাকে পৌরসভায় উন্নীত করা হয়েছে, সেহেতু পৌরসভার সব সুযোগ-সুবিধা পৌরবাসীর কাছে পৌঁছে দিতে হবে। যদি এমনটি না হয়, তবে সেটি হতে পারে প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা বা দুর্বলতার কারণে। পৌর সুবিধা নিশ্চিত করতে অবশ্যই প্রশাসনিক দক্ষতা ও সক্ষমতা প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে পৌর নাগরিকদেরও আন্তরিক ও সহযোগী মনোভাবের হতে হবে।