নতুন করে বাড়বে আয়তন

সিলেট সিটি করপোরেশনের আয়তন ২৬ দশমিক ৫ বর্গকিলোমিটার। ওয়ার্ড রয়েছে ২৭টি। লোকসংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। ২০০২ সালে পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর এই কাঠামোর সিলেট মহানগরকে আরও বড় করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও গঠন করা হবে।

গতকাল শনিবার সিলেটে বিষয়টি নিয়ে প্রথম আলোচনা হয়েছে। সিলেট-১ (মহানগর-সদর) আসনের সাংসদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, বর্ধিত এলাকার সাংসদ (সিলেট–৩) মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী, সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানসহ শহরতলির জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়। সেখানে জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনকে পৃথক দুটি প্রস্তাব তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ প্রস্তাব তৈরি হলে চূড়ান্ত পর্যায়ে আলোচনার পর মহানগর বর্ধিত করার কাজ শুরু করা হবে বলে সভায় জানানো হয়।

সিটি করপোরেশন সম্প্রসারিত হলে দক্ষিণ দিকে সিলেট-৩ সংসদীয় আসনের একটি অংশ, উত্তর-পশ্চিম দিকে সিলেট সদর উপজেলার একাংশ মহানগরে অন্তর্ভুক্ত হবে।

জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম। সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, সিলেট শহরতলির ছয়টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরাও সভায় উপস্থিত ছিলেন।

সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) পরিধি বাড়ানো হলে নগরবাসীকে আরও বেশি নাগরিক সুবিধা ও অধিকতর রাজস্ব আদায় হবে বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সভায় তিনি বলেছেন, ‘সিলেট সিটি করপোরেশনের পরিধি বাড়লে সেবার মানও বাড়বে। আরও বেশি মানুষকে নাগরিক সুবিধা দেওয়া সম্ভব হবে। এতে অধিকতর রাজস্ব আদায়ও হবে।’

সভার শুরুতে সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসন মহানগর বড় করার প্রাসঙ্গিকতা উত্থাপিত হয়। মহানগর বড় করার প্রস্তাবের সঙ্গে একাত্ম হন সভায় উপস্থিত বড়ইকান্দি, মোল্লারগাঁও, কুচাই, টুলিটিকর, খাদিমপাড়া ও টুকেরবাজার ইউপি চেয়ারম্যানরা। তাঁরা জানান, ২০০২ সালে সিলেটকে পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করার সময় ইউনিয়ন পরিষদ এলাকাকে ভেঙে কিছু এলাকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এতে করে নাগরিক ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এবার মহানগর বড় করার ক্ষেত্রে যেন কোনো ইউনিয়ন এলাকাকে ভাঙা না হয়। অন্তর্ভুক্ত করতে হলে পুরো ইউনিয়নকে মহানগর করার পক্ষে মত দেন তাঁরা।

সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন প্রসঙ্গেও কথা বলেছেন। মহানগর বড় করার পর নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সিলেট শহর বড় হলে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে। দেশের সব কটি বড় শহরে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রয়েছে। খুলনা ও রাজশাহীতে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থাকলেও আমাদের সিলেটে নেই। শহর বড় হলে এ দাবি আরও জোরালো হবে। তখন আমরা বলতে পারব, সিলেট অনেক বেশি মানুষের শহর, তাই সিলেটেও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করতে হবে।’

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ১৮৭৮ সালে পৌনে দুই বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত হয়েছিল পৌরসভা। ২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশনে উন্নীত হলে পরিধি বাড়ে। তখন ২৬ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার করা হয় সিটি করপোরেশনের আয়তন। সিটি করপোরেশন গঠনের প্রায় দেড় যুগ পর এবার ১৬০ দশমিক ৬২ বর্গকিলোমিটার আয়তনে মহানগর করার প্রাক্‌–প্রাথমিক প্রস্তাব রয়েছে। এটি হলে ২৭টি ওয়ার্ডের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি হবে।

সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিলেট মহানগর পুলিশ (এসএমপি) এলাকা হওয়ার পর থেকে সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকা সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এ বিষয়ে বিগত বাজেট বক্তৃতায় আমার সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব রয়েছে। এসব প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে মহানগর বড় করার আলোচনাটি সভার মধ্যে স্থান পেয়েছে।’