বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট: মধ্যপ্রাচ্যে সম্প্রচারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি

টিভি চ্যানেলগুলো বিদেশি স্যাটেলাইট ও বিকল্প পদ্ধতিতে মধ্যপ্রাচ্যে সম্প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। ফাইল ছবি
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। ফাইল ছবি

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে গিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশের চ্যানেলগুলো দেখা যাচ্ছে না। মধ্যপ্রাচ্যে সম্প্রচারের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কর্তৃপক্ষ। তবে টিভি চ্যানেলগুলো বিদেশি স্যাটেলাইট ও বিকল্প পদ্ধতিতে ওই অঞ্চলে সম্প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।

টিভি চ্যানেলগুলোর সামনে বড় সমস্যা হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে (বিএস-১) গিয়ে তারা মধ্যপ্রাচ্যের বাজার হারাচ্ছে। কারণ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট স্যাটেলাইট অরবিটে ১১৯ ডিগ্রি অবস্থানে আছে। আর বাংলাদেশ ও বহির্বিশ্বে থাকা বাংলাভাষী দর্শকদের জন্য সবচেয়ে উপযোগী অবস্থান ৭৬ ডিগ্রি, যা বিদেশি স্যাটেলাইট অ্যাপস্টার সেভেনের আছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের কাভারেজ পেতে তারা থাইল্যান্ডের স্যাটেলাইট থাইকমের সঙ্গে আলোচনা করলেও বিষয়টি এগোয়নি।

এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএসসিএল) চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের কাভারেজ পেতে আইপিভিত্তিক সিগন্যাল পাঠাতে টেন্ডার আহ্বান করা হবে। যদিও এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। তিনি বলেন, সাবমেরিন দিয়ে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সিগন্যাল মধ্যপ্রাচ্যে পাঠিয়ে ওই অঞ্চলের বাজার ধরা যাবে। এটি করতে আরও মাস দুয়েক সময় লাগবে বলে জানান তিনি।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট (বিএস-১) দিয়ে দেশের টিভি চ্যানেলগুলোতে চলছে পুরোদমে বাণিজ্যিক সম্প্রচার। চ্যানেলগুলো বলছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে তারা ভালো মানের অডিও-ভিডিও সিগন্যাল পাচ্ছে। তবে সম্প্রচারের ক্ষেত্রে মাঝেমধ্যে ‘ব্ল্যাকআউট’-এর ঘটনা ঘটছে।

গত ১৩ অক্টোবর সন্ধ্যা সাতটা ২ মিনিট থেকে ১৩ মিনিট পর্যন্ত প্রায় ১১ মিনিট ‘ব্ল্যাকআউট’ হয়েছিল। অন্তত ছয়টি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ওই ঘটনার কথা নিশ্চিত করেছে প্রথম আলোর কাছে। টিভি চ্যানেলগুলো থেকে সিগন্যাল টেলিপোর্টের মাধ্যমে গাজীপুরের গ্রাউন্ড স্টেশনে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান জাদু ডিজিটাল অ্যান্ড ব্রডব্যান্ড লিমিটেড ও সামিট কমিউনিকেশন।

ব্ল্যাকআউট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাদু ডিজিটালের কেব্‌ল অ্যান্ড ইন্টারনেট বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘পরীক্ষামূলক সম্প্রচারের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা ছিল। তবে বাণিজ্যিক সম্প্রচারে তেমন বড় কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। ১৩ অক্টোবরের ব্ল্যাকআউট সম্পর্কে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। বরং টিভি চ্যানেলগুলো তাদের কারিগরি সমস্যার কারণে এই জটিলতায় পড়ছে, যার দোষ আমাদের দিচ্ছে।’

অবশ্য ১৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় এই ব্ল্যাকআউট হয়েছিল বলে নিশ্চিত করেন বিসিএসসিএলের চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ। তিনি বলেন, কিছু কারিগরি জটিলতা হয়েছিল বলে এটা হয়েছে। তবে যাতে একই ধরনের জটিলতা ভবিষ্যতে না হয়, সে জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

শাহজাহান মাহমুদ জানান, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট দিয়ে পুরোদমে বাণিজ্যিক সম্প্রচার চলছে। টিভি চ্যানেলগুলোর পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত বড় অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এর অর্থ সম্প্রচার কারিগরি দিক থেকে ভালোভাবে চলছে।

বিসিএসসিএল সূত্র জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে টেলিভিশনগুলো সম্প্রচারের প্রথম অংশের কাজ চলছে ভূগর্ভস্থ তারের মাধ্যমে। এটি ‘টেলিপোর্ট’ পদ্ধতি। মাটির ওপরে ও নিচে দুভাবে অপটিক্যাল ফাইবার লাইন টেনে গাজীপুরের সজীব ওয়াজেদ জয় ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রে সিগন্যাল পাঠানো হচ্ছে। সেই সিগন্যাল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট হয়ে কেব্‌ল অপারেটরদের মাধ্যমে বাসাবাড়িতে বিতরণ চলছে।

তবে টেলিপোর্ট পদ্ধতি প্রসঙ্গে বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর বক্তব্য হচ্ছে, এ পদ্ধতিতে মাঝেমধ্যে সম্প্রচার বিঘ্নিত হচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগের জন্য তারা টেলিপোর্ট সিস্টেমের ওপর ভরসা রাখতে পারছে না।

দেশে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ৩৫টি টিভি চ্যানেল আছে। বাণিজ্যিক সম্প্রচারে যাওয়ার পর থেকে সব চ্যানেলের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচার করার কথা। তবে হাতে গোনা কয়েকটি চ্যানেল বাদে বাকিরা বিদেশি স্যাটেলাইটের সম্প্রচারও চালিয়ে যাচ্ছে। অধিকাংশ টিভি চ্যানেলই বিদেশি স্যাটেলাইটের সঙ্গে তাদের চুক্তি বাতিলের নোটিশ জানিয়ে দিয়েছে। বিদেশি স্যাটেলাইটের সঙ্গে টিভি চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার এ বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে শেষ হয়ে যাবে। কিছু কিছু টিভি চ্যানেলের ইতিমধ্যেই সে চুক্তি শেষ হয়েছে। ফলে টিভি চ্যানেলগুলোকে এখন সম্পূর্ণ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইটের অভিজাত ক্লাবে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। এতে বাংলাদেশের খরচ হয় ২ হাজার ৯০২ কোটি টাকা। উৎক্ষেপণের এক বছর চার মাস পর আয় করতে যাচ্ছে বিএস-১। এতে বিদেশি স্যাটেলাইটকে দেওয়া অর্থ দেশেই থাকছে। নভেম্বর মাস থেকে স্যাটেলাইট কর্তৃপক্ষ বিল পেতে যাচ্ছে।

চ্যানেল আইয়ের সম্প্রচার বিভাগের কর্মকর্তা হাসান কামরুল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচার এখন পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন নয়। দুটি স্যাটেলাইটের সম্প্রচার পাশাপাশি চলছে। তবে খুব শিগগির বিদেশি স্যাটেলাইটের সঙ্গে আমাদের চুক্তি বাতিল করা হবে।’