তিন বছরে জব্দ ২০ কোটি টাকা: দুদক চেয়ারম্যান

ইকবাল মাহমুদ। ফাইল ছবি
ইকবাল মাহমুদ। ফাইল ছবি

গত তিন বছরে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ১৬৫টি ব্যাংক হিসাবে প্রায় ২০ কোটি টাকা জব্দ করেছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। একই সময়ে ২১টি বাড়ি, ২৪টি ফ্ল্যাট, ৭৭ একর জমি, ৫টি বিলাসবহুল গাড়িও ক্রোক করা হয়েছে। আজ রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ফর প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যান্ড কমব্যাটিং ফাইনান্সিং অব টেররিজম-২০১৯-২১’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

দুদকের এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুদকের করা মানি লন্ডারিং মামলায় ২০১৩ থেকে ২০১৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত আদালতের আদেশে বাজেয়াপ্ত হওয়া ৫৮৪ কোটি ৪৬ কোটি টাকার সম্পদ পুনরুদ্ধার করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

দুদক চেয়ারম্যান সভায় বলেন, পারস্পরিক আইনগত সহায়তা প্রস্তাবের (এমএলএআর) মাধ্যমে দুটি মানি লন্ডারিং মামলায় ১ কোটি ৬০ লাখ হংকং ডলার এবং ৮ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ড ওই দেশ দুটি জব্দ করেছে। এই অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি দুর্নীতি। মানি লন্ডারিং-সংক্রান্ত ঝুঁকি শনাক্ত করতে দুদক বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সহযোগিতায় তিনবার জাতীয় ঝুঁকি মূল্যায়ন শেষ করেছে। এই মূল্যায়নে দুর্নীতিকেই মানি লন্ডারিংয়ের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ পাচার এবং অবৈধ অর্থের প্রবাহই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, বিএফআইইউ কখনো কখনো একই রিপোর্ট একাধিক এজেন্সিকে দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে একই অভিযোগ একাধিক সংস্থা তদন্ত করলে ভুল-বোঝাবুঝির যেমন সৃষ্টি হতে পারে, তেমনি সময় ও কর্মঘণ্টার অপচয়ও হয়। ফলে সার্বিকভাবে মানি লন্ডারিং-বিরোধী তৎপরতা প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুদক বিশ্বাস করে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং হয় বাণিজ্য কার্য-প্রক্রিয়ায় (ট্রেড বেইজড মানি লন্ডারিং)। গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটিসহ বিভিন্ন সংস্থার বৈশ্বিক সূচকে দেখা যায়, প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ মানি লন্ডারিং হয় বাণিজ্য কর্ম-প্রক্রিয়ায়। এ কারণে দুদক যৌথভাবে একাধিক সংস্থার সমন্বয়ে তদন্তকে স্বাগত জানায়।

বিএফআইইউর সংস্কার প্রস্তাব করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটি আরও কার্যকর হবে যদি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সংস্থার কিছু কর্মকর্তাকে এই কর্মপ্রয়াসে সম্পৃক্ত করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মানি লন্ডারিং জাতির এক নম্বর শত্রু। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সোনালি ভবিষ্যতের জন্য এর প্রতিরোধ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।
এদিকে একই স্থানে বিশ্বব্যাংক আয়োজিত ‘সাউথ এশিয়া অ্যাকাউন্টেবিলিটি রাউন্ড টেবল: প্রমোটিং অ্যাকাউন্টেবিলিটি অ্যান্ড ইন্টিগ্রিটি ইন গভর্নমেন্ট স্পেন্ডিং’ শীর্ষক সেমিনারেও বক্তব্য দেন দুদকের চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও সিএজি রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয়ে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অপচয় যাতে না ঘটে, সে বিষয়ে কাজ করে। তাই এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সুসমন্বয়ের প্রয়োজন।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। বক্তব্য দেন কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী প্রমুখ।