৩০ বছরে অর্জন কম নয়

কেক কেটে ময়মনসিংহ নাগরিক আন্দোলনের ৩০তম বার্ষিকী উদযাপন।  ছবি সংগৃহীত
কেক কেটে ময়মনসিংহ নাগরিক আন্দোলনের ৩০তম বার্ষিকী উদযাপন। ছবি সংগৃহীত

১৯৮৯ সালের কথা। ময়মনসিংহ পৌরসভার বিভিন্ন সড়কে কাদাপানি জমে থাকত। সড়কে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকত মানুষের মলমূত্র। নর্দমা থেকে কেঁচো উঠে সড়কে পড়ে থাকত। এ ছাড়া ময়মনসিংহ পৌরসভার বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা ও নাগরিক ভোগান্তি তো ছিলই। এ রকম পরিস্থিতিতে নাগরিকদের জীবন যখন বিপন্ন হওয়ার পথে, তখন ময়মনসিংহের কয়েকজন সচেতন নাগরিকের ভাবনা হলো, যেকোনোভাবেই হোক ময়মনসিংহ পৌরবাসীকে এসব দুর্ভোগ থেকে মুক্তি এবং একটা পরিচ্ছন্ন শহর উপহার দিতে হবে।

ভাবনা থেকেই শুরু। চিন্তাটি সাংগঠনিক রূপ নেয় ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলন ও উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদ নামে। নাগরিক এই সংগঠনটি গত শনিবার ৩০ বছর পূর্ণ করেছে। এই তিন দশকের পথচলায় রয়েছে নানা সফলতা। এর মধ্যে রয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগ বাস্তবায়ন, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠা, ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠা, ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রতিষ্ঠা ও সর্বশেষ ব্রহ্মপুত্র নদ খনন। এসব অর্জনের পর এখনো থেমে নেই নাগরিক আন্দোলনের কর্মসূচি। বর্তমানে ময়মনসিংহ নগরের যানজট ও নগরের বাইরে রেললাইন সরিয়ে নেওয়ার দাবি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে সৃষ্ট নাগরিক ভোগান্তি নিয়েও কাজ করছে তারা।

গত শনিবার রাতে নগরের জুবলি সড়কে নাগরিক আন্দোলনের কার্যালয়ে সংগঠনের ৩০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তখন কথা হয় নাগরিক আন্দোলনের একাধিক নেতার সঙ্গে। তাঁরা জানান, ১৯৮৯ সালে যখন ময়মনসিংহ পৌরসভার বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে নাগরিকদের জীবন বিপন্ন তখন বর্ষীয়ান কয়েকজন রাজনীতিবিদ উদ্যোগ নেন এসব সমস্যা সমাধানের জন্য নাগরিক আন্দোলনের। রাজনৈতিকভাবে সম্ভব নয়, তবে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে নাগরিক সমস্যা দূর করা সম্ভব, এমন ভাবনা থেকেই ১৯৮৯ সালের ১৬ নভেম্বর মুকুল নিকেতন উচ্চবিদ্যালয়ে সচেতন নাগরিকেরা মিলিত হন। সেদিন পাঁচজনের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন হয়। কমিটিতে ছিলেন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি প্রয়াত মজিবুর রহমান খান, ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনের বর্তমান সাংসদ নাজিম উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির ময়মনসিংহ জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ চক্রবর্তী, অধ্যাপক আতিকুর রহমান ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফয়জুর রহমান ফকির। কমিটি বিভিন্ন নাগরিক সমস্যা নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। কিছুদিন পর জেলা নাগরিক আন্দোলন ও উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়। সেই কমিটিতে আইনজীবী আনিসুর রহমান খানকে সভাপতি ও আমির আহমেদ চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।

নাগরিক আন্দোলনের নেতারা জানান, ময়মনসিংহের উন্নয়নের জন্য ময়মনসিংহ বিভাগের দাবিকে সবচেয়ে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। কারণ, তাঁরা জানতেন বিভাগ হলে সিটি করপোরেশন আর শিক্ষা বোর্ড হবে। নাগরিক কমিটি প্রায় ২৬ বছর ধরে ময়মনসিংহ বিভাগ চেয়ে আন্দোলন করেছে। নাগরিক আন্দোলনের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি ছিল, ব্রহ্মপুত্র নদ খনন। ২০১০ সালে এই দাবিতে জোর আন্দোলন হয়েছে। সে বছর ৩৩ সদস্যের একটি নাগরিক দল যায় গাইবান্ধার পাগলার চরে ব্রহ্মপুত্রের উৎসমুখে। সেখান থেকে ব্রহ্মপুত্রের কিছু ভিডিও ধারণ করে এনে তৎকালীন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের কাছে যায় তারা। নৌপরিবহনমন্ত্রীকে বোঝানো হয় ব্রহ্মপুত্র খনন কেন জরুরি। বর্তমানে ব্রহ্মপুত্র খননের কাজ চলছে। নাগরিক কমিটি এখন ব্যস্ত ব্রহ্মপুত্র খনন পর্যবেক্ষণে। সম্প্রতি খননের পরিকল্পনা প্রকাশ্যে টানানোর দাবি জানিয়ে কর্মসূচি পালন করেছে তারা।

ময়মনসিংহ শহর যানজটমুক্ত করার উদ্দেশ্যে ব্যবস্থা নেওয়া এবং নগরের ভেতর থেকে রেলস্টেশন ও রেললাইন অপসারণ করার দাবি এখন নাগরিক আন্দোলনের। তারা এ দাবিতে বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি দিয়েছে।

বর্তমানে নাগরিক আন্দোলনের কমিটি ৫১ সদস্যের। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন ৮৪ বছরের আইনজীবী আনিসুর রহমান খান। তবে প্রতি দুই বছর পরপর নিয়মিত সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হয়।

ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলন ও উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন বলেন, নাগরিক আন্দোলনের কমিটিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লোক আছেন। তবে এখানে রাজনৈতিক পরিচয় তুলে ধরা হয় না। নাগরিকদের স্বার্থে এখানে সব নাগরিক নিজেদের রাজনৈতিক পদ–পরিচয় ভুলে কাজ করেন। দীর্ঘ ৩০ বছরে অনেক সাফল্য আছে। অনেক কাজ এখনো বাকি। সেগুলো সম্পন্ন করতে সচেষ্ট সবাই।