ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে স্কুলশিক্ষক গ্রেপ্তার

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় শাহিনুজ্জামান শাহিন (২৫) নামের এক শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শিশুটির মায়ের করা মামলায় দামুড়হুদা মডেল থানা-পুলিশ গতকাল রোববার সন্ধ্যায় ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে।

এ ঘটনার সূত্র ধরে দামুড়হুদা মডেল থানায় রোববার রাতে আরেকটি মামলা করেন স্থানীয় এক সাংবাদিক। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি (এসএমসি) অভিযোগে থাকা শিক্ষককে রক্ষা করতে গতকাল বিকেল ৫টার দিকে একটি সালিস বৈঠকের আয়োজন করে। চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিকের স্থানীয় সংবাদদাতা রোকনুজ্জামান সেই সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে তাঁকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। এ সময় বৈঠকের ভিডিও ধারণ করায় তাঁর মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হয়। একই সঙ্গে এটিএম কার্ড ও নগদ টাকা জোর করে নিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় ওই সাংবাদিক এসএমসির সভাপতি সেলিম উদ্দিনসহ আটজনকে আসামি করে গতকাল রাতেই দামুড়হুদা মডেল থানায় পৃথক মামলা করেছেন।

এলাকাবাসী ও থানায় করা অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক শাহিনুজ্জামান উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি চতুর্থ শ্রেণির ওই ছাত্রীকে নানাভাবে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। গত শনিবার বিদ্যালয় ছুটির পর শ্রেণিকক্ষে প্রাইভেট পড়ানো শেষে অন্যদের ছুটি দিলেও কৌশলে ওই ছাত্রীকে বসিয়ে রাখেন তিনি। পরে তাকে সেখানেই ধর্ষণের চেষ্টা করেন। ছাত্রীটি কান্নাকাটি শুরু করলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাড়িতে ফিরে সে মা-বাবাকে সব খুলে বলে। পরিবারের পক্ষ থেকে এসএমসির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষককে জানানো হয়।

বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করতে এসএমসির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক মিলে গতকাল বিকেল পাঁচটায় বিদ্যালয়ে সালিসের আয়োজন করেন। ওই সালিসের সময় চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রকাশিত দৈনিক ‘সময়ের সমীকরণ’–এর সংবাদদাতা রোকনুজ্জামান ভিডিও চিত্র ধারণ করতে গেলে এসএমসির সদস্যরা তাঁকে বাধা দেন। এরপর বিদ্যালয়ের বাইরে নিয়ে মারধর করেন এবং ভিডিও ধারণের কাজে ব্যবহৃত মুঠোফোন,এটিএম কার্ড ও সঙ্গে থাকা সাড়ে সাত হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন।

রোকনুজ্জামান তাঁর কাছে থাকা অন্য একটি ফোন থেকে পুলিশ সুপার মো. জাহিদুল ইসলামকে ঘটনা খুলে বলেন। পুলিশ সুপারের নির্দেশে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন। এরপর দামুড়হুদা মডেল থানা-পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শিক্ষক শাহিনুজ্জামানকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরে ছাত্রীর মায়ের করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

এসএমসির সভাপতি সেলিম উদ্দিন ধর্ষণচেষ্টার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মেয়েটির নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে পরামর্শক্রমে সালিসের আয়োজন করা হয়েছিল। ছাত্রীটির পরিবারও চাইছিলেন সালিসে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে। তবে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে সাংবাদিক লাঞ্ছিতের ঘটনাটি ঘটেছে।

দামুড়হুদা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সাইদুজ্জামান সাইদ প্রথম আলোকে জানান, গতকাল রাতে স্কুলছাত্রীর মায়ের করা মামলায় শিক্ষক শাহিনুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ সোমবার তাঁকে আদালতে হাজির করা হবে।