তূর্ণা সব বিপজ্জনক সিগনাল অমান্য করেছে: তদন্ত প্রতিবেদন

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দবাগ স্টেশনে ট্রেন দুর্ঘটনায় বিভাগীয় পর্যায়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন চলে এসেছে। প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার জন্য তূর্ণা নিশীথার চালক, সহকারী চালক ও গার্ডকে দায়ী করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তূর্ণা সব বিপজ্জনক সিগনাল অমান্য করে স্টেশনে ঢোকে। এরপর সরাসরি আঘাত করে উদয়নের ১১ ও ১২ নম্বর বগিতে।

তদন্ত কমিটির ওই প্রতিবেদন রেলওয়ের মহাপরিচালককে দেওয়ার পর গতকাল রোববার রেলওয়ের সচিব বরাবর পাঠানো হয়েছে। রেলের বিভাগীয় পর্যায়ের তদন্ত কমিটির প্রধান ও পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) মো. নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের ওই তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়।

বিভাগীয় পর্যায়ের তদন্ত কমিটির অন্য তিন সদস্য হলেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ মো. হামিদুর রহমান, বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী ফয়েজ আহামেদ ও বিভাগীয় টেলিসংকেত প্রকৌশলী (ডিএসটিই) মো. জাহেদ আরেফিন পাটোয়ারী তন্ময়।

তদন্ত প্রতিবেদনে ট্রেন দুর্ঘটনার জন্য তূর্ণার লোকোমাস্টার (চালক) মো. তাসের উদ্দিন, সহকারী লোকোমাস্টার অপু দে ও ট্রেনটির গার্ড আবদুর রহমানকে দায়ী করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে ১৬ জন যাত্রী নিহত ও ৫৭ জন যাত্রী আহত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, দুর্ঘটনায় রেলওয়ের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ক্যারেজ ও ওয়াগন বিভাগের ২০ লাখ ৬২ হাজার ৩৮০ টাকা, লোকো বিভাগের ১৭ লাখ টাকা এবং প্রকৌশল বিভাগের ২০ হাজার ৯০০ টাকা ক্ষতির কথা তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রেনের চালক ও সহকারী চালক যদি তাদের অনুকূলে থাকা প্রতিটি লাল সংকেত মেনে ট্রেন চালাতেন, তাহলে ওই দুর্ঘটনা হতো না। ট্রেনের গার্ড যদি তাঁর দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতেন, তাহলে হয়তো দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হতো।

প্রতিবেদনে ৮ দফা সুপারিশও তুলে ধরেছে কমিটি। এর মধ্যে চালক ও গার্ডদের সতর্কতার সঙ্গে সিগন্যাল পর্যবেক্ষণ, সংকেত আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে আরও যত্নবান হওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া গার্ড ও চালকদের জন্য নিয়মিত রিফ্রেশার্স কোর্স আয়োজন; ট্রেন পরিচালনার আগে চালক, গার্ডদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিশ্চিত করা; রাতের ট্রেনে চালক ও গার্ডদের আখাউড়া জংশনে পরিবর্তনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। চালক ও গার্ডদের রেলের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মোবাইল সিম দেওয়া, ওয়াকিটকি সব সময় সচল রাখা, লোকোমোটিভ ও ট্র্যাকে বিপদের সময় ট্রেন থামানোর মতো ডিভাইস বসানোর কথাও বলা হয়েছে।

১২ নভেম্বর দিবাগত রাত পৌনে তিনটার দিকে কসবার মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনের আউটারে (বহিরাংশে) চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আন্তনগর তূর্ণা নিশীথা এবং সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেসের সংঘর্ষ হয়। উদয়নের মাঝামাঝি তিনটি বগিতে সজোরে ঢুকে যায় তূর্ণা নিশীথা। এতে ১৬ জন যাত্রী নিহত এবং শতাধিক যাত্রী আহত হন। এ ঘটনায় রেল মন্ত্রণালয়, রেল ভবন ও বিভাগীয় রেলওয়ে কার্যালয় চারটি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের একটিসহ মোট পাঁচটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।