১৪ কিশোরের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি পিছিয়েছে

রিফাত শরীফ। ফাইল ছবি
রিফাত শরীফ। ফাইল ছবি

বরগুনায় আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ কিশোর আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন বিষয়ক শুনানি পিছিয়ে ৮ জানুয়ারি ধার্য করেছেন আদালত। আজ সোমবার সকাল ১০টায় বরগুনার শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান এ আদেশ দেন। এ ছাড়া মামলার চার আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত ।

আদালত সূত্রে জানায়, সকালে ১৪ কিশোরকে শিশু আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় বাদী পক্ষের আইনজীবী ও এক আসামির পক্ষে অভিযোগ গঠন বিষয়ক শুনানির জন্য সময় চেয়ে আবেদন করলে আদালত ৮ জানুয়ারি তারিখ ধার্য করেন। ১৪ কিশোরের পক্ষে তাদের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। আদালত যেসব আসামির জামিন আবেদনের ওপর এক মাস আগে শুনানি গ্রহণ করেন, আজও তাদের আবেদনের ওপর শুনানি গ্রহণ করেন। শুনানি শেষে আদালত চার আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।

রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকাসহ ২৪ জনকে আসামি করে ১ সেপ্টেম্বর এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। আয়শা সিদ্দিকাকে এই মামলায় ৭ নম্বর আসামি করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে এই হত্যার পরিকল্পনায় যুক্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় সেখানে ২ নম্বর আসামি রিফাত ফরাজীকে ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। মামলার ২৪ আসামির মধ্যে ১৪ জনই অপ্রাপ্তবয়স্ক। আয়শা সিদ্দিকা বর্তমানে জামিনে মুক্ত আছে।

অপ্রাপ্তবয়স্ক এক আসামির আইনজীবী মনিরুল ইসলাম মনির বলেন, ‘আমার মক্কেল এজাহারভুক্ত আসামি নয়। তিনি ৭ অক্টোবর স্বেচ্ছায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হয়েছেন। তার অপরাধ তিনি এই মামলার পাঁচ নম্বর আসামির বন্ধু।’

বাদী পক্ষের আইনজীবী এম.মজিবুল হক কিসলু বলেন, রিফাত শরীফকে আসামিরা পরিকল্পনা করে হত্যা করেছে। এটা কোনো স্বাভাবিক হত্যা মামলা নয়। সারা বিশ্ববাসী দেখেছেন, কীভাবে একটি ছেলেকে (রিফাত শরীফ) কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এদের জামিন দিলে বাদী আদালতে সাক্ষ্য জানাতে পারবে না। আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে আসামিদের জামিনের আবেদন না মঞ্জুর করেন।

গত ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে তাঁর স্ত্রী আয়শার সামনে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করে। ওই হত্যাকাণ্ডের একাধিক ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে স্বামী রিফাতকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে দেখা যায় নিহতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকাকে।

এ ঘটনায় রিফাতের বাবা আবদুল হালিম শরীফ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয় আয়শাকে। কিন্তু আয়শার শ্বশুর মামলার ১৮ দিন পর গত ১৪ জুলাই এই হত্যাকাণ্ডে আয়শা জড়িত-এমন দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেন। পরদিন একই দাবিতে জেলায় মানববন্ধন করা হয়, সেখানে বরগুনা-১ আসনের সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে এবং জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক সুনাম দেবনাথও অংশ নেন।

আয়শার বাবা মোজাম্মেল হোসেন তখন অভিযোগ করেছিলেন, এই সুনামই পুরো ঘটনায় প্রভাব বিস্তার করছেন। ঘটনার পর থেকে সুনাম আয়শাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ লেখা লিখেছেন।

মানববন্ধনের তিন দিনের মাথায় ১৬ জুলাই আয়শা সিদ্দিকাকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। পরদিন পুলিশ তাঁকে আদালতে তুলে যখন রিমান্ড আবেদন করে, তখন তাঁর পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। আয়শাকে গ্রেপ্তারের পরদিন ১৭ জুলাই এই মামলার অন্যতম আসামি রিফাত ফরাজীকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। এ বিষয়ে নিজের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকে বরগুনার এসপি মারুফ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, আয়শা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

১৮ জুলাই কারাফটকে আয়শার সঙ্গে দেখা করে এসে তাঁর বাবা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, আয়শা জানিয়েছেন, পুলিশ তাঁকে যা বলতে বলেছে, তিনি সেভাবেই জবানবন্দি দিয়েছেন। না বললে আরও ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হবে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা আয়শাকে হুমকি দিয়েছিলেন।