যুক্তিতর্ক শুরু, সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি রাষ্ট্রপক্ষের

মঞ্জুরুল ইসলাম
মঞ্জুরুল ইসলাম

গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে গুলিতে নিহত আওয়ামী লীগের সাংসদ মঞ্জুরুল ইসলাম ওরফে লিটন হত্যা মামলায় রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শুরু হয়েছে। এতে রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের মৃত্যুদণ্ড দাবি করে। বিপক্ষের আইনজীবীরা আসামিদের নির্দোষ দাবি করে খালাস চান।

গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ দিলীপ কুমার ভৌমিকের আদালতে নিহত সাংসদের স্বজন, মামলার সাক্ষী ও আসামিদের উপস্থিতিতে ওই যুক্তিতর্ক শুরু হয়। চলে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত। তবে যুক্তিতর্ক শেষ না হওয়ায় আদালত মুলতবি ঘোষণা করেন। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে আবার যুক্তিতর্ক শুনানির দিন ধার্য করেছেন বিচারক।

থানা-পুলিশ ও আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বামনডাঙ্গার মাস্টারপাড়ায় নিজের বাড়িতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন মঞ্জুরুল ইসলাম। এ ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন তাঁর বড় বোন ফাহমিদা কাকলী। তদন্ত শেষে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ও সাবেক সাংসদ কাদের খানসহ আটজনের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এর আগে ২০১৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার বাসা থেকে কাদের খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকে তিনি গাইবান্ধা জেলা কারাগারে রয়েছেন। একই মামলার অপর আসামি কাদের খানের একান্ত সহকারী (পিএস) শামছুজ্জোহা, গাড়িচালক আবদুল হান্নান, গৃহকর্মী মেহেদি হাসান, শাহীন মিয়া ও রানা মিয়া জেলা কারাগারে রয়েছেন। একই ঘটনায় দায়ের হওয়া অস্ত্র মামলায় গত ১১ এপ্রিল কাদের খানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তিনি মঞ্জুরুল হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত তিনটি অস্ত্রের মধ্যে একটি থানায় জমা দিয়েছেন। ছয়টি গুলিসহ একটি অস্ত্র তাঁর বাড়ির উঠান থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। অপর অস্ত্রটির সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি। যুক্তিতর্ক শেষ হলে এ মাসের যেকোনো দিন মামলাটির রায় ঘোষণার দিন ধার্য করতে পারেন আদালত।

গতকাল যুক্তিতর্ক শুরুর আগে সকালে কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তায় কাদের খানসহ ছয় আসামিকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এর আগে সুবল নামের এক আসামি কারাগারে অসুস্থ অবস্থায় মারা যান। ভারতে পলাতক রয়েছেন আসামি চন্দন কুমার। তাঁকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে দেশে আনার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

যুক্তিতর্ক শেষে সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এজাহার, আসামি-সাক্ষীদের জবানবন্দি, স্বীকারোক্তি, অস্ত্র উদ্ধারসহ নানা দিক আলোকপাত করে আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়েছে। যুক্তিতর্ক শেষ হলে আদালত এ মাসেই রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করতে পারেন। এ মামলায় আদালতে অভিযুক্ত আসামিদের ফাঁসিসহ সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী আবদুল হামিদ বলেন, সাংসদ মঞ্জুরুলকে যেভাবে ষড়যন্ত্র করে হত্যা করা হয়েছে, ঠিক তেমনি আসামি কাদের খানকে এ মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। হত্যার সময় কাদের খান দেশের বাইরে ছিলেন। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও আদালত সঠিক বিচার-বিশ্লেষণ করলে আসামিরা নির্দোষ প্রমাণিত হবেন।

২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল এ মামলায় প্রথম দফায় আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। বাদী, নিহত সাংসদের স্ত্রী, তদন্ত কর্মকর্তাসহ এ পর্যন্ত ৫৯ জনের সাক্ষ্য নিয়েছেন আদালত। গত ৩১ অক্টোবর সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রম শেষ হয়। ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালতে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। পরে পর্যায়ক্রমে কারাগারে থাকা আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানি হয়।