১০ ফুট কচু, নাম অ্যানাকোন্ডা

বিশাল আকারের অ্যানাকোন্ডা কচু সাজিয়ে রাখা হয়েছে স্টলে। দেখছেন কৌতূহলী দর্শকেরা। গতকাল বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রের উন্নয়ন মেলায়।  ছবি: প্রথম আলো
বিশাল আকারের অ্যানাকোন্ডা কচু সাজিয়ে রাখা হয়েছে স্টলে। দেখছেন কৌতূহলী দর্শকেরা। গতকাল বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রের উন্নয়ন মেলায়। ছবি: প্রথম আলো

সাড়ে ১০ ফুট লম্বা ‘অ্যানাকোন্ডা’। তবে এটি আমাজনের সেই বিখ্যাত সাপ নয়, কুষ্টিয়ার মানকচু। উঠেছে ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের উন্নয়ন মেলায়। এই নতুন জাতের মানকচু দেখতে মেলার দর্শকদের কৌতূহলও কম নয়। আরও আছে মেহেরপুরের মুজিবনগরের ১৬ কেজি ওজনের চালকুমড়াসহ হরেক রকম কীটনাশকমুক্ত সবজি ও মৌসুমি ফলের সমাহার।

 দেশের প্রান্তিক ক্ষুদ্র উৎপাদকের উৎপাদিত ঘরে নিত্যব্যবহার্য পণ্য থেকে শুরু করে কীটনাশকমুক্ত কৃষিপণ্য, কারুপণ্য, খাদ্যদ্রব্য, বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী, প্রসিদ্ধ ও সমাদৃত হাজারো পণ্যের সমাহার নিয়ে চলছে উন্নয়ন মেলা। পল্লী কর্ম–সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এই মেলার আয়োজন করেছে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ১৪ নভেম্বর এ মেলা শুরু হয়েছে, চলবে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য খোলা। মেলায় স্টল রয়েছে ১২৫টি প্রতিষ্ঠানের। তাদের পণ্যসম্ভার উপস্থাপন করা হয়েছে ১৯০টি স্টলে।

সম্মেলন কেন্দ্রের খোলা মাঠে দৃষ্টিনন্দন সজ্জায় সাজানো হয়েছে স্টলগুলো। সব স্টলেই গ্রামীণ প্রায় সব পণ্য পাওয়া যায়। দর্শনার্থীরা কেউ কিছু না কিনে ফিরছেন না। আবার অনেকে খেতে খেতে ঘুরে দেখছেন বিভিন্ন স্টল। ‘মেলা থেকে সতেজ ও কীটনাশকমুক্ত সবজি কিনব বলে আজ বাজার করিনি। এখানে এসে সবজি কিনেছি।’ বলছিলেন সঞ্চিতা ইসলাম। তিনি উন্নয়ন মেলায় এসে বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে প্রয়োজনমতো সবজি কিনেছেন।

উন্নয়ন মেলায় কুষ্টিয়ার রুরাল রিকনস্ট্রাকশন ফাউন্ডেশনের (আরআরএফ) স্টলে বিক্রি ও প্রদর্শিত হচ্ছে অ্যানাকোন্ডা কচু। এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সেলিম রেজা জানালেন, আকৃতির কারণে তাঁরা এর নাম দিয়েছেন অ্যানাকোন্ডা। সাধারণত ৪ থেকে ১১ ফুট পর্যন্ত কচুগুলো লম্বা হয়। মেলায় আনা সাড়ে ১০ ফুট লম্বা এই মানকচুর দাম ২ হাজার ২০০ টাকা। ক্রেতারা এই কচু পুরোটা কিনতে পারবেন, আবার কেটেও আংশিক বিক্রি করছেন উদ্যোক্তারা। মেলার শেষ দিন ক্রেতাদের এটি কেটে আংশিক বিক্রি করা হবে বলে জানান উদ্যোক্তারা। কুষ্টিয়ায় বাণিজিকভাবে এই কচুর চাষ হচ্ছে। 

 তা ছাড়া এ স্টলে আরও দেখা যায় চটের তৈরি পাখির বাসা। একেকটি পাখির বাসার দাম ১০০ টাকা। আরও আছে যশোরের তরমুজ, হাতে ভাজা মুড়ি, চানাচুর। সোসাইটি ফর ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (এসডিআই) বিক্রি করছে ধামরাইয়ের নিরাপদ সবজি। এখানে খাওয়ার উপযোগী করে বিক্রি হচ্ছে শিমের ও কাঁঠালের বীজ। আছে বিভিন্ন স্বাদের চাল, ঘি, হাঁস-মুরগি-কোয়েলের ডিম, মসলা গুঁড়া করার সানকি নোড়া প্রভৃতি। 

মহেশখালীর শুঁটকি কিনতে পাওয়া যাচ্ছে প্রত্যাশী স্টলে। এখানে রুপচাঁদা মাছের শুঁটকি প্রতি কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৩ হাজার ৫০০ টাকায়। দিশার স্টলে আছে হরেক রকমের মিষ্টি। নারীদের বিভিন্ন পোশাক আছে আশ্রয় স্টলে। নরসিংদী থেকে আসা বৃষ্টি নামের স্টলে হাতের কাজের সুতি জামা, নকশিকাঁথা, বিছানার চাদর আছে। মেলায় আছে গ্রামীণ পিঠা। আছে শীতের পোশাক, শতরঞ্জি, বিছানার চাদর, বালিশের কাভার। টঙ্গীর বিসিকে তৈরি কারুপণ্য রয়েছে হিড বাংলাদেশের স্টলে। আর ‘সখি প্যাড’ স্টলে আছে সুলভ মূল্যের স্যানিটারি ন্যাপকিন। এখানে কয়েকটি খাবারের দোকান আছে। যেখানে মেলায় আগতরা সুলভ মূল্যে ভরপেট খেতে পারবেন। এসব প্রতিষ্ঠান খাবার সরবরাহও করে থাকে। পিকেএসএফের উন্নয়ন মেলায় প্রতিদিনই প্রদর্শনীর পাশাপাশি উন্নয়ন বিষয়ে সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে। মেলা ২০ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে, তবে দুদিন আগেই গতকাল সোমবার বিকেলে সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এবং অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন পিকেএসএফের চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ।

 সমাপনী অনুষ্ঠানে সেরা স্টল ও সেরা সম্ভাবনাময় পণ্যের জন্য ছয়টি স্টলকে পুরস্কার দেওয়া হয়। সেরা স্টলের প্রথম পুরস্কার পায় গ্রাম বিকাশ কেন্দ্র। প্রথম রানারআপের পুরস্কার পায় গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা। আর দ্বিতীয় রানারআপের পুরস্কার পায় উন্নয়ন প্রচেষ্টা নামের একটি সংগঠন। আর সেরা সম্ভাবনাময় পণ্য হিসেবে প্রথম পুরস্কার পায় গরুর দুধের তৈরি পনির ‘মোজারেলা চিজ’।