গুমাইয়ের বুকে সোনালি উৎসব

রাঙ্গুনিয়ায় গুমাই বিলের সোনালি ফসল কৃষকেরা ঘরে তুলছেন। গতকাল সকালে চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউনিয়নের ছুপিপাড়ায়।  আব্বাস হোসাইন
রাঙ্গুনিয়ায় গুমাই বিলের সোনালি ফসল কৃষকেরা ঘরে তুলছেন। গতকাল সকালে চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউনিয়নের ছুপিপাড়ায়। আব্বাস হোসাইন

হালকা কুয়াশার পর্দা সরে গিয়ে মিষ্টি রোদ এসে পড়তেই দেখা গেল দিগন্তজোড়া প্রান্তরের সোনালি ঢেউ। মৃদু বাতাসে পাকা ধানের শীষের দোলা বিলের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। এর মাঝেই দেখা গেল কাস্তে হাতে ব্যস্ত কৃষকদের। চট্টগ্রামের শস্যভান্ডারখ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিলে চলছে ধান কাটা। মাঠের পাকা ধান কেটে তুলতে হবে গোলায়। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বিলের ফসলের খেতে ধান কাটার ধুম পড়েছে। 

গতকাল মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে গুমাই বিলের চারা বটতল, কদমতলী, লিচুবাগান, ছুপিপাড়াসংলগ্ন বিলের বিভিন্ন অংশে গিয়ে দেখা যায়, বিলে পুরোদমে চলছে ধান কাটার কাজ। কৃষকেরা ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ কেউ কাঁধে করে ধানের আঁটি নিয়ে বিলের মাঝখানে হেঁটে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে পরিপূর্ণ এক দৃশ্য—যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা। 

চন্দ্রঘোনার ছুপিপাড়া অংশে বিলের মাঝামাঝি থেকে কাটা ধানের আঁটি কাঁধে নিয়ে ফিরছিলেন কৃষি শ্রমিক মো. ইউনুছ (৫০)। তিনি বলেন, ‘দুই দিন ধরে ধান কাটছি। ধান কাটার পর বিলের শেষ অংশ থেকে সকালে দুইবার গেরস্তের বাড়ি ধান পৌঁছে দিয়েছি। দৈনিক ৫০০ টাকা বেতনে আমরা ৩ জন শ্রমিক কাজ করছি। ৬ কানি জমির জন্য ধান কাটা ও পৌঁছে দিতে আরও দুই দিন লাগতে পারে।’ 

কদমতলী এলাকার কৃষক মো. মুছা বলেন, ‘বিলের কদমতলী অংশে তিন কানি (১২০ শতক) জমিতে উফশি (উচ্চফলনশীল জাত) ধান চাষ করেছি। সঙ্গে বীজ, সার ও কীটনাশকের দাম মিলিয়ে কানি প্রতি প্রায় ৯ হাজার টাকা খরচ পড়েছে তাঁর।’ 

মুছার কাছে ফলনের কথা জিজ্ঞেস করলেই তিনি বলেন, ‘খরচ আর ধানের দাম মিলিয়ে এবার মোটামুটি লাভ হবে। ধান বিক্রি করব। কিছু ধান রাখতে পারলে বাড়ির জন্য চাল কিনতে হবে না।’ 

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে এবার বিলের ৩ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে আমনের চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে এবার ধান হবে ৫ টন করে। এই হিসাবে ধান হবে ১৫ হাজার ৭৫০ টন। প্রতি হেক্টরে এবার চাল হবে ৩ দশমিক ৩ টন করে। এই হিসাবে চাল হবে ১০ হাজার ৩৯৫ টন। 

জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, এবার আবহাওয়া চাষের অনুকূলে ছিল। ফলনের উপযোগী বৃষ্টিও হয়েছে। ধান পাকার সঙ্গে সঙ্গে পোকার আক্রমণ থাকলেও দমন করা গেছে। ওই সময় পরিমিত বৃষ্টিপাত হওয়ায় পোকার আক্রমণ হয়নি।ZA