চাল আসছে, দামও বাড়ছে

চালের ছবিটি প্রতীকী।
চালের ছবিটি প্রতীকী।

কয়েক দিন ধরেই বাজার গরম করে রেখেছে পেঁয়াজ আর শীতকালীন সবজি। এরই মধ্যে বাড়তে শুরু করেছে চালের দামও। নতুন ধান কাটার পর স্বল্প পরিসরে চাল বাজারে আসতে শুরু করলেও গত ১৫ দিনে কেজিপ্রতি চালের দাম ২ থেকে ৪ টাকা করে বেড়েছে। যদিও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি চাল উৎপাদিত হচ্ছে।

এ বছর রাজশাহীতে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৪ হাজার ৯৮১ হেক্টর, চাষ হয়েছে ৭৬ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে ৫ দশমিক ৪৭ হেক্টর ধান উৎপাদিত হবে। সেই হিসাবে রাজশাহীতে এবার ধানের ফলন হবে ৪ লাখ ১৭ হাজার ৬০ মেট্রিক টন। অন্যদিকে নাটোরে চলতি মৌসুমে আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৫ হাজার ৫৬৯ হেক্টর জমিতে, চাষ হয়েছে ৬৯ হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে ফলন নির্ধারণ করা হয়েছিল ২ দশমিক ৫৮ মেট্রিক টন, তবে প্রতি হেক্টরে উৎপাদিত হচ্ছে ৩ দশমিক ২০ মেট্রিক টন হারে।

রাজশাহীতে গত ১৫ দিনের ব্যবধানে মোটা ও চিকন—সব ধরনের চাল কেজিতে অন্তত চার টাকা বেড়েছে। আর নাটোরে গত তিন দিনে চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২ টাকা। রাজশাহীর পাইকারি বাজারে বিআর-২৮ জাতের চালের ৫০ কেজির একটি বস্তা ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন বস্তাপ্রতি ২০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। একই চালের ৮৪ কেজির বস্তা বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৬০০ টাকায়। গতকাল পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়। মিনিকেট চালের ৫০ কেজির বস্তা ৩০০ টাকা আর বাসমতী ৫০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। নগরীর কাদিরগঞ্জ, কুমারপাড়া ও রানীবাজারে খোঁজ নিয়ে চালের মূল্যবৃদ্ধির এই চিত্র পাওয়া যায়। নাটোরের খুচরা বাজারে মিনিকেট ৩৮, ছাঁটা মিনিকেট ৪০, ইরি–২৮ চাল ৩৪, কাঠারী ৪৮ থেকে ৫২, একই দামে বিক্রি হচ্ছে শম্পা কাঠারী। আর গুটি চাল বিক্রি হচ্ছে ২৬ টাকা কেজি দরে। 

রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা চালের মূল্যবৃদ্ধির কারণ বলতে না পারলেও নাটোরের ব্যবসায়ীরা সরকারের খাদ্যগুদামে চাল কেনাকে দায়ী করেছেন। নাটোরের কানাইখালী চালের বাজারের মিতালি রাইস এজেন্সির মালিক হারুন অর রশীদ জানান, সরকার গুটি চাল কিনছে প্রতি কেজি ৩৬ টাকা। অথচ বাজারে এ চালের দাম ২৬ টাকা। এ কারণে কেউ কেউ বাজার থেকে চাল কিনে খাদ্যগুদামে সরবরাহ করছেন। ফলে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাজারেও কিছু দাম বাড়ছে। তবে এই বাজারে চাল কিনতে আসা কিবরিয়া হোসেন নামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান, গুদামে কেনা হচ্ছে গুটি চাল। এই চাল খোলাবাজারে খুব কমই বিক্রি হয়। তাই অন্যান্য চালের দাম বাড়ার পেছনে কোনো কারণ নেই।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ালেও এটি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা নেই। কারণ, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই পুরোদমে নতুন চাল বাজারে আসবে। তখন দাম কমবে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সামছুল হক জানান, গতকাল পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার ৩৭ শতাংশ রোপা ও আমন ধান কাটা হয়েছে। এর মধ্যে অল্প করে নতুন চাল বাজারে উঠছে। ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে পুরোদমে নতুন চাল বাজারে চলে আসবে। তাহলে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার কারণ সম্পর্কে নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মোস্তফা কামাল বলেন, চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার কোনো কারণ নেই। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী গুজব ছড়িয়ে চালের দাম বাড়াচ্ছে।

মোস্তফা কামাল জানান, ২০১৯-২০ উৎপাদন বর্ষে প্রতি কেজি চালের উৎপাদন খরচ দাঁড়িয়েছে ২৮ টাকা ৭১ পয়সা। সরকারি খাদ্যগুদামে চাল কেনা হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৬ টাকা দরে। ভোক্তা ও উৎপাদকদের স্বার্থ বিবেচনা করেই এ দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।