মানুষের মুখে মুখে 'লবণ'

লবণের দাম বেড়ে যাচ্ছে—এ গুজবে ফরিদপুর শহরের বিভিন্ন বাজারে লবণ কেনার হিড়িক পড়ে যায়। গতকাল বিকেলে শহরের চকবাজার এলাকায়।  প্রথম আলো
লবণের দাম বেড়ে যাচ্ছে—এ গুজবে ফরিদপুর শহরের বিভিন্ন বাজারে লবণ কেনার হিড়িক পড়ে যায়। গতকাল বিকেলে শহরের চকবাজার এলাকায়। প্রথম আলো

বাজারে লবণের সংকট, দাম বেড়ে যাবে—এ গুজব ছড়িয়ে পড়ায় ফরিদপুরে লবণ কেনার জন্য হুলুস্থুল পড়ে যায়। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল চারটা থেকে হঠাৎ ব্যস্ত হয়ে ওঠে শহরের মুদি ও লবণের দোকানগুলো। ক্রেতাদের ভিড় সামলাতে নাভিশ্বাস অবস্থার সৃষ্টি হয়। 

গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, সবার মুখে একই কথা ‘লবণ’। কেউ বলে লবণ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে। কেউ বলে ১৫০ টাকা কেজি, কেউ বলেন ৪০০ টাকা কেজি। তবে বাজার ঘুরে লবণের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির তথ্য জানা যায়নি। 

লোকজনকে হন্যে হয়ে লবণ কিনতে দেখা গেছে। দোকানদারেরা বলেন, ৫ কেজি থেকে শুরু করে ৫০ কেজি পর্যন্ত লবণ কিনেছেন অনেকে। ফরিদপুরের বড় কাঁচাবাজার হিসেবে খ্যাত হাজী শরীয়তুল্লাহ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিক দিয়ে লবণের বস্তা          রিকশায় তুলছেন ক্রেতারা। শ্রমিক শ্যামল কর্মকার বলেন, ৫০ কেজি ওজনের দুই বস্তা লবণ একাই এক ক্রেতা কিনে নিয়েছেন। 

বাজারের ব্যবসায়ী গোবিন্দ বলেন, ‘মানুষ হুমড়ি খেয়ে লবণ কিনছে, আমরাও বেচছি। তবে দাম বেশি রাখা হচ্ছে না। কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা দরে’। শহরের বিসর্জন ঘাট এলাকার নার্গিস বেগম লবণ কিনলেন ১৫ কেজি। তিনি বলেন, ‘লবণের দাম বেড়ে যাবে বলে বেশি কিনেছি’। 

শহরের ময়ড়াপট্টি, চকবাজার প্রভৃতি দোকানে লবণ কেনার জন্য মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। চকবাজারের এসকেডি লবণ ভান্ডারের সামনে ভিড় সামলাতে একপর্যায়ে দোকানের একটি সাটার বন্ধ করে দিতে হয়। শহরের চকবাজারের চালপট্টির পাইকারি দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, সবার হাতে লবণের প্যাকেট। সেখানে ভাই ভাই স্টোরে লবণ কিনতে আসা একজন নারী বলেন, দোকানি তাঁর কাছ থেকে এক কেজি লবণের দাম রেখেছেন ৮০ টাকা। 

এ অবস্থায় গুজব প্রতিহত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে নামেন। তাঁরা দোকানে দোকানে গিয়ে ক্রেতাদের আশ্বস্ত করেন। এ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আসলাম আলী। তাঁরা দোকানে দোকানে গিয়ে লবণের দাম জিজ্ঞাসা করতে থাকেন। এর আগেই খবর পেয়ে ভাই ভাই স্টোরের দোকানিসহ কয়েকজন তাঁদের দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যান। 

আসলাম আলী বলেন, বিক্রেতাদের বলেছেন, কোনো রকম হুজুগ তৈরি হয়, এমন পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয় সে কথা। তাঁরা দোকানে দোকানে গিয়ে তদারকি করেছেন। 

জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, লবণের বিষয়টি শুধুই একটি গুজব। তিনি বলেন, বাণিজ্যসচিবের সঙ্গে তাঁর দুপুরে কথা হয়েছে। তিনি (বাণিজ্যসচিব) বলেছেন, লবণের সংকট নেই। 

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার ঘাঘর বাজারে লবণ কেনার হিড়িক পড়ে। ঘাঘর বাজারের প্রায় অর্ধশতাধিক পাইকারি ও খুচরা দোকানে লাইন দিয়ে খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতারা লবণ কিনেছেন। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজার তদারকিতে নেমেছে। 

সরেজমিনে জানা গেছে, গত সোমবার রাত থেকে কোটালীপাড়া উপজেলায় লবণের কেজি ২০০ টাকা হবে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। দুপুর ১২টার মধ্যে ডিলার ও অনেক পাইকারির ব্যবসায়ীর গোডাউন লবণশূন্য হয়ে যায়। 

উপজেলার নাগরা গ্রামের ভ্যানচালক আলামিন বলেন, গতকাল রাতে ঢাকা থেকে আমার এক আত্মীয় ফোন করে তাঁকে জানিয়েছেন লবণের কেজি ২০০ টাকা হবে। তাই সকালেই বাজার থেকে ১০ কেজি লবণ কিনে নিয়েছেন। 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম মাহফুজুর রহমান বলেন, এ মুহূর্তে লবণের কোনো সংকট নেই। বেশি দামে লবণ বিক্রি করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।