চ্যালেঞ্জের নাম তিস্তা: মুয়াজ্জেম আলী

সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলী
সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলী

সম্পর্ক এই মুহূর্তে খুবই ভালো, কিন্তু তিস্তা চুক্তি হলে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাবে। পাঁচ বছর ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে কাটিয়ে দেশে ফেরার আগে এই মন্তব্য করলেন সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলী।

নয়াদিল্লিতে প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়ার সদস্যদের সঙ্গে আলাপচারিতায় গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মুয়াজ্জেম আলী আরও বলেন, দুই দেশের মধ্যে প্রবাহিত ৫৪ নদীর পানি বণ্টন ও অববাহিকা ব্যবস্থাপনাই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা দুই দেশকে করতেই হবে। কারণ, প্রথমত, পানি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এর সঙ্গে আবেগের প্রশ্ন জড়িয়ে রয়েছে। তা ছাড়া, পানির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কৃষি প্রধান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিষয়টিও।

তিস্তার জলপ্রবাহ যে কমে গেছে, হাইকমিশনার তা স্বীকার করেন। কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যে রাজ্যে তিস্তার উৎপত্তি, সেই সিকিমে এই নদীতে তিন-চারটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে গড়া হয়েছে দুটি সেচ প্রকল্প। বাংলাদেশেও সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ একটা সেচ প্রকল্প গড়েছিলেন। সব মিলিয়ে যে পরিমাণ পানি শুখা মৌসুমে তিস্তায় থাকার কথা তা কমে গেছে। সেই কমে যাওয়া পানি প্রবাহ বাড়িয়ে তার সুষম বণ্টন হওয়া দরকার। এই প্রসঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দেন, ফারাক্কা প্রকল্প যে উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল তা কাজে দেয়নি। বরং ওই প্রকল্প বিহারকে বিপদে ফেলেছে। ওই রাজ্য ফরাক্কার বিরুদ্ধে নানা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।

খোলামেলা এই আলোচনায় মুয়াজ্জেম আলী নানা প্রশ্নের জবাব দেন। আসামের সাংবাদিকেরা এনআরসি ও অনুপ্রবেশ সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, বেশি রোজগারের জন্য বাংলাদেশিরা ইউরোপে পাড়ি দিতে পারেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নয়। ভারতের ওই অঞ্চলের তুলনায় বাংলাদেশের মানুষজনের মাথাপিছু আয় অনেক বেশি। কাজেই অনুপ্রবেশের অভিযোগ অর্থহীন। তিনি বলেন, বরং বাংলাদেশের পোশাক, পরিষেবা ও তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ভারতীয়দের আনাগোনা অনেক বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে ভারতীয়দের রেমিট্যান্সের পরিমাণও।

এই অনুষ্ঠানে বহু ব্যক্তিগত প্রশ্নেরও জবাব দেন বাংলাদেশের কালজয়ী লেখক ও সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর ভ্রাতুষ্পুত্র। মুয়াজ্জেম আলী বলেন, এই পাঁচ বছরের কার্যকালে তাঁকে সবচেয়ে বেশি তৃপ্তি দিয়েছে স্থল সীমান্ত চুক্তি। অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টন ও অববাহিকা ব্যবস্থাপনা চূড়ান্ত হওয়ার বিষয়টি বাকি জীবনে দেখে যেতে চান।

অনেক সুখস্মৃতি এই সময় তাঁকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। মুয়াজ্জেম আলীর মনে পড়ছে, পাঞ্জাবের অমৃতসর শহরের সেই প্রবীণার মুখ, যিনি তাঁকে ছুঁয়ে বলেছিলেন, যে দেশের স্বাধীনতার জন্য তাঁর পুত্র প্রাণ দিয়েছে, সেই দেশের মানুষকে ধরা-ছোঁয়ার মধ্য দিয়ে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের স্পর্শ পেলেন। মনে পড়ছে সেই স্মৃতিও। প্রথমবার যখন দিল্লিতে হাইকমিশনে কাজে যোগ দিয়েছিলেন তখন তাঁর গৃহে সিলিন্ডারের গ্যাসে রান্না হতো। একটির জায়গায় দুটি সিলিন্ডার পাওয়ার দাবিতে একদিন গ্যাস স্টেশনে গিয়েছিলেন। এজেন্সির মালিক তাঁর আরজি শুনে বলেছিলেন, যে দেশের মুক্তির জন্য দুটো পা আমি হারিয়েছি, সেই দেশের মানুষকে দুটো সিলিন্ডার অবশ্যই দেব। এই সব মুখ এবং স্বাধীনতার সংগ্রামে ভারতের অবদান কোনো দিন ফিকে হওয়ার নয়।

সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলী ডিসেম্বরের মাঝামাঝি বাংলাদেশে ফিরে যাচ্ছেন। দিল্লিতে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন মহম্মদ ইমরান।