সিলেট যুবদলের দুপক্ষ পাল্টাপাল্টি সভায় তৎপর

সিলেট নগরের একটি রেস্তোরাঁয় সিলেট জেলা যুবদলের আহ্বায়ক সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে বর্ধিত সভা। ছবি: প্রথম আলো
সিলেট নগরের একটি রেস্তোরাঁয় সিলেট জেলা যুবদলের আহ্বায়ক সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে বর্ধিত সভা। ছবি: প্রথম আলো

সিলেটে জাতীয়তাবাদী যুবদলের নতুন কমিটি ও কমিটিবিরোধী দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি সভা করেছে। আজ বুধবার নগরের একটি রেস্তোরাঁর সম্মেলনকক্ষে নতুন কমিটির জেলা শাখা প্রথম সভা করে। সভায় জেলার আওতাধীন সব কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে মাসব্যাপী নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি নেওয়া হয়। একই সময়ে কমিটিবিরোধী পক্ষ কর্মী সভা করে নতুন কমিটিকে ‘আওয়ামী এজেন্টরা সিলেট যুবদলের ঐক্য বিনষ্ট করেছে’ বলে অভিযোগ করে।

প্রায় ১৯ বছর পর ১ নভেম্বর সিলেটে যুবদলের জেলা ও মহানগরের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ২৯ সদস্যের জেলা কমিটি ও ২৭ সদস্যের মহানগর কমিটিতে স্থান পাওয়া অধিকাংশ নেতা দলীয় কর্মসূচিতে নিষ্ক্রিয় বলে অভিযোগ রয়েছে। তৃণমূলকে না জানিয়ে কেন্দ্র থেকে কমিটি গঠনে ত্যাগী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনে সক্রিয় নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে সুবিধাভোগী একটি শ্রেণিকে পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়েছে দাবি করে যুবদলের পদবঞ্চিত একটি পক্ষে ক্ষোভ দানা বাঁধে।

বিএনপি সূত্র জানায়, ১ নভেম্বর রাতেই বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের একটি পক্ষ কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য পদে থাকা সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে গণপদত্যাগ করার হুমকি দেয়। এ পরিস্থিতিতে আরিফুল হকসহ সিলেটে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় কেন্দ্রীয় পদে থাকা চারজন নেতা পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। ৩ নভেম্বর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে দেখা করে তাঁরা পদত্যাগপত্র দাখিল করতে ঢাকায় যান। মহাসচিব তাঁদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে যুবদলের কমিটি বিষয়ে পুনর্বিবেচনার আশ্বাস দিয়ে সময় চান।

সিলেট নগরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে জেলা ও মহানগর যুবলীগের ব্যানারে কর্মী সভার আয়োজন করেন নবগঠিত কমিটির বিরোধীরা। ছবি: প্রথম আলো
সিলেট নগরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে জেলা ও মহানগর যুবলীগের ব্যানারে কর্মী সভার আয়োজন করেন নবগঠিত কমিটির বিরোধীরা। ছবি: প্রথম আলো

এ ঘটনার পর থেকে সিলেটে মেয়রসহ চার নেতার অনুসারীরা প্রায় এক সপ্তাহ ধরে নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও উপজেলা পর্যায়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ঘরোয়া পরিসরে মতবিনিময়, গত শনিবার বিক্ষোভ করেন। যুবদলের কমিটি বাতিল করে সিলেটে ‘বিএনপি বাঁচানোর’ বিক্ষোভ মিছিল করতে গিয়ে নেতা-কর্মীদের লাঠিপেটার শিকার হতে হয়। জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি ইকবাল বাহার চৌধুরী, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাদিকুর রহমান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাহবুবুল হক চৌধুরীসহ ৩০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করে। উচ্চ আদালত জামিন নিয়ে আজ প্রথম কর্মী সভায় মিলিত হন তাঁরা। কর্মী সভায় সভাপতিত্ব করেন ইকবাল বাহার চৌধুরী। শফি আহমদ খান ও টিটন মল্লিকের সঞ্চালনায় সভায় সাদিকুর রহমান, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মাহবুবুল হক চৌধুরী, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাকিল মুর্শেদ, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক নেতা আবদুস সামাদ, জেলার সাবেক নেতা জয়দেব চক্রবর্তী প্রমুখ বক্তব্য দেন।

এদিকে নবগঠিত জেলা কমিটির বর্ধিত সভা বেলা দুইটায় শুরু হয়। শেষ হয় সন্ধ্যায়। জেলার আহ্বায়ক সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর কমিটির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সদস্যসচিব মকসুদ আহমদের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মমিনুল ইসলাম, আখতার আহমেদ, আশরাফ উদ্দিন, সাইদ আহমদ, সাহেদ আহমদ, ময়নুল ইসলাম, কবির উদ্দিন, সোহেল আরেফিনসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত প্রতিনিধিরা। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে উপজেলাসহ শাখা কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। আহ্বায়ক সিদ্দিকুর রহমান সভাপতির বক্তৃতায় সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে সিলেট যুবদলকে নতুন রূপে সাজানো হবে বলে জানান।