'নেতাবন্দনায়' ঢাকা হাসপাতাল

সম্মেলন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের লাগনো ব্যানার-ফেস্টুনে ঢেকে গেছে শহীদ সামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল। গতকাল দুপুরে।  ছবি: প্রথম আলো
সম্মেলন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের লাগনো ব্যানার-ফেস্টুনে ঢেকে গেছে শহীদ সামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল। গতকাল দুপুরে। ছবি: প্রথম আলো

হাসপাতালের ফটকের সামনে সারিবদ্ধ বিলবোর্ড। সম্মুখভাগ থেকে শুরু করে প্রবেশপথ, হাসপাতালের সাইনবোর্ড সবই ঢাকা পড়েছে। তা দেখে সামনে দিয়ে যাওয়া একজন পথচারীর কাছে আরেকজনের কৌতূহলভরা জিজ্ঞাসা, ‘ই-ফিরা কিতা (এবার কি) আওয়ামী লীগের সম্মেলন হাসপাতালও অইবনি?’

সিলেটের চৌহাট্টা এলাকায় শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের সামনে গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দেখা মেলে এমন চিত্র। হাসপাতালের সামনে সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ। সেখানেই আওয়ামী লীগের জেলা ও মহানগর শাখার সম্মেলনের স্থান নির্ধারণ হয়েছে। চূড়ান্তভাবে এ ঘোষণার পর থেকে একটি-দুটি করে এখন পুরো হাসপাতালটাই ঢাকা পড়েছে নানা রকম বিলবোর্ড, ফেস্টুনে। সব কটিতেই স্থানীয় নেতা আর বিলবোর্ডদাতাদের ছবি বড় করা। সম্মেলন সফল করার আহ্বানের সঙ্গে যেন নেতাবন্দনা মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে।

সংগঠন সূত্র জানায়, সিলেটে ২০০৫ সালে আওয়ামী লীগের জেলা ও মহানগরের সম্মেলন হয়েছিল। ২০১১ সালে সম্মেলন ছাড়াই কমিটি গঠিত হয়। গত ২ অক্টোবর কেন্দ্রীয় নেতাদের সাংগঠনিক সফরে জেলা ও মহানগর শাখার বর্ধিত সভা হয়। এ সভাতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাংসদ মাহবুব উল আলম হানিফ সিলেটে দলের বিভিন্ন মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি নিয়ে স্থানীয় নেতাদের ভর্ৎসনা করে জাতীয় সম্মেলনের আগে জেলা সম্মেলনের নির্দেশ দেন। এই নির্দেশনায় ৫ ডিসেম্বর মহানগর ও জেলার সম্মেলনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়। নগরীর কেন্দ্রস্থলের সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বেলা ১১টায় হবে সম্মেলন।

গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, চৌহাট্টা পয়েন্ট থেকে শুরু হয়েছে বিলবোর্ড, ফেস্টুন ও নানা রকম প্রচারণার ব্যানার। এর মধ্যে চৌহাট্টা মোড়ে যত বিজ্ঞাপনী সংস্থার বিলবোর্ড ছিল, সবই দখল হয়েছে। চৌহাট্টা মোড় পেরিয়ে শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতাল। সরকারি এই হাসপাতালটি এখন বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। হাসপাতালের সম্মুখভাগের পুরো সীমানাপ্রাচীরজুড়ে সারিবদ্ধ বিলবোর্ড। প্রধান ফটকে ছিল স্বাস্থ্যসচেতনতায় সরকারি তিনটি বিলবোর্ড ছিল। সেটি ঢেকে হাসপাতালের সাইনবোর্ড পর্যন্ত আড়াল করে সাঁটানো হয়েছে বিলবোর্ডসহ নানা রকম প্রচারণার ফেস্টুন। হাসপাতাল থেকে এ রকম প্রচারণা চলেছে সড়কের শেষ পর্যন্ত রিকাবিবাজার পয়েন্টে। সেখানে ‘কবি নজরুল স্মরণি’সহ মোড়ের চারদিকে ব্যাংক, বিমাসহ বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী সংস্থার বড় বড় বিলবোর্ড শোভা পাচ্ছে স্থানীয় নেতাদের বড় বড় ছবি।

আওয়ামী লীগের সম্মেলন উপলক্ষে নেতাদের নামে প্রচারণায় পুরো হাসপাতাল ঢেকে পড়ায় একধরনের অস্বস্তিকর অবস্থার মুখে পড়েছেন কর্তব্যরত ব্যক্তিরা। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সুশান্ত মহাপাত্র প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কাছ থেকে কেউই বিলবোর্ড, ফেস্টুন লাগানোর জন্য অনুমতি নেননি। জানামতে এসব কাজে অনুমতি দেওয়াও হয় না। যদিও এসব সাময়িক। আমরা কাল (বৃহস্পতিবার) বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।’

হাসপাতাল এলাকায় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সব নেতার নামেই বিলবোর্ড রয়েছে। এমনকি দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের ছবিসংবলিত বিলবোর্ডও দেখা গেছে। এর মধ্য হাসপাতাল এলাকায় শুধু কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহউদ্দিন সিরাজের নামে বিলবোর্ড দেখা যায়নি। 

হাসপাতাল ঢেকে এ রকম প্রচারণা সম্পর্কে মিসবাহউদ্দিন সিরাজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা মনে হয় উৎসাহ-উদ্দীপনা থেকে হয়েছে। তবে হাসপাতাল ঢাকা ঠিক হয়নি। আমার মনে হয়, নেতাদের না জানিয়ে কর্মী–সমর্থকেরাই এসব করেছেন। হাসপাতালের সমস্যা হলে বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা নেব।’