মহেশপুর সীমান্তে ১০ দিনে ২০৩ অনুপ্রবেশকারী আটক

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার খালিশপুরে অনুপ্রবেশের সময় গতকাল বুধবার আটক কয়েকজন নারী-পুরুষ ও শিশু। ছবি: প্রথম আলো
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার খালিশপুরে অনুপ্রবেশের সময় গতকাল বুধবার আটক কয়েকজন নারী-পুরুষ ও শিশু। ছবি: প্রথম আলো

ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে হঠাৎ করে ভারত থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই অনেক মানুষ বাংলাদেশে ঢুকছেন বা ঢোকার চেষ্টা করছেন। গত ১০ দিনে এই সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার সময় ২০৩ জনকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা দিয়ে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

বিজিবি বলছে, আটক হওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগই ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা। আটক হওয়া লোকজন জানিয়েছেন, ভারতে জাতীয় নাগরিক তালিকার (এনআরসি) আতঙ্ক ও নানা চাপের কারণে তাঁরা ভারত ছেড়ে চলে এসেছেন। তাঁরা আর সে দেশে ফিরতে চান না।

মহেশপুর সীমান্তের কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, বিজিবির হাতে যতজন আটক হয়েছেন, অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা তার কয়েক গুণ বেশি, যাঁরা লুকিয়ে বন-জঙ্গল মাড়িয়ে এ দেশে প্রবেশ করছেন।
তবে বিজিবি জানিয়েছে, সীমান্তে তাদের কঠোর নজরদারি আছে। কেউ যাতে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে বিষয়ে তারা সতর্ক রয়েছে।

ভারতের আসামে গত ৩১ আগস্ট জাতীয় নাগরিক তালিকার (এনআরসি) চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে ঠাঁই হয়নি ১৯ লাখের বেশি মানুষের নাম। তালিকা প্রকাশের পর এই বিশালসংখ্যক মানুষের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে গেছে। এ নিয়ে বাংলাদেশে উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে গত ২৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে বৈঠকে এবং ৫ অক্টোবর নয়াদিল্লিতে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, এনআরসি নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগের কিছু নেই। তবে সর্বশেষ গতকাল বুধবার ভারতের ক্ষমতাসীনদল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সভাপতি ও দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, আসামের মতো এনআরসি সারা ভারতেই হবে। ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় তিনি এ কথা বলেছেন।

মহেশপুর উপজেলায় বিজিবির ৫৮ খালিশপুর ব্যাটালিয়নের কর্মকর্তারা জানান, উপজেলার জলুলী, খোসালপুর, পলিয়ানপুর, মাটিলা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ বেড়েছে। অনুপ্রবেশের চেষ্টার সময় এসব এলাকা থেকে গত ১০ দিনে ৭৫ জন নারী, ৬৪ জন পুরুষ, ৬৪টি শিশুসহ মোট ২০৩ জনকে আটক করা হয়েছে। অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

খালিশপুর ৫৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল কামরুল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, সীমান্ত থেকে তাঁরা যাঁদের আটক করছেন, তাঁদের বেশির ভাগই জানিয়েছেন তাঁরা এনআরসির আতঙ্ক ও নানা চাপে ভারত ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। অনেকে সহায়–সম্বল ফেলে চলে আসছেন। যেমন বেঙ্গালুরু থেকে আসা একটি পরিবারের আট সদস্য বিজিবিকে জানিয়েছেন, তাঁরা স্থাবর সব সম্পত্তি ফেলে চলে এসেছেন। তাঁরা আর ভারতে ফিরতে চান না। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে অধিকাংশই মুসলিম। দু-চারজন পাওয়া গেছে, যাঁরা অন্য ধর্মাবলম্বী। আটক ব্যক্তিরা একসময় এ দেশে ছিলেন বলে পরিচয় দিচ্ছেন। কিন্তু দেশের যেসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে তাঁদের বাড়ি ছিল বলে তাঁরা জানাচ্ছেন, তাৎক্ষণিকভাবে তার সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে বিজিবির সদর দপ্তরকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

লে. কর্নেল কামরুল আহসান আরও বলেন, ‘এঁরা আসলে কোথাকার, সেটা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া অসম্ভব। এঁরা আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেলে কোথায় উঠবেন, এটা নিয়েও একটা চিন্তা রয়েছে। তারপরও বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বিজিবির পক্ষ থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।’
মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুজন সরকার জানান, বিষয়টি জেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় উত্থাপিত হয়েছিল। তা ছাড়া ঘটনাটি শুনে তিনি বিজিবির সঙ্গে কথা বলেছেন। বিজিবির পক্ষ থেকে তাঁকে এনআরসির সমস্যায় অনুপ্রবেশ হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।

এদিকে বার্তা সংস্থা ইউএনবি গতকাল বুধবার এক খবরে জানায়, গতকাল সকালে যশোরের বেনাপোল ও দৌলতপুর সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে ঢোকার সময় ৫৪ জনকে আটক করেছে বিজিবি। এর মধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশুও রয়েছে। পরে তাঁদের বেনাপোল বন্দর থানায় হস্তান্তর করা হয়।