হাজারো মানুষের শোভাযাত্রায় উৎসবের আমেজ

‘প্রাণের উৎসবে, মাতি উল্লাসে’ স্লোগানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের দুই দিনব্যাপী চলছে প্রথম পুনর্মিলনী উৎসব। কাজীর দেউড়ি এলাকা, চট্টগ্রাম, ২১ নভেম্বর। ছবি: জুয়েল শীল
‘প্রাণের উৎসবে, মাতি উল্লাসে’ স্লোগানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের দুই দিনব্যাপী চলছে প্রথম পুনর্মিলনী উৎসব। কাজীর দেউড়ি এলাকা, চট্টগ্রাম, ২১ নভেম্বর। ছবি: জুয়েল শীল

মাথায় টুপি, গায়ে লাল-সবুজ টি-শার্ট। হাতে হাত রেখে হেঁটে চলেছেন সবাই। সেই দলে যেমন আছেন ২৫ বছরের তরুণ, তেমনি আছেন ৬৫ বছরের প্রৌঢ়ও। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম পুনর্মিলনী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত শোভাযাত্রার দৃশ্য এটি। হাজারো মানুষের এই শোভাযাত্রার শুরুটা দেখা যায়, শেষটা দেখা যায় না।


বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে পুনর্মিলনী উদ্‌যাপন বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে তিনটা থেকে শুরু হয়। এ উপলক্ষে নগরের চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণ থেকে ‘প্রাণের উচ্ছ্বাসে, মাতি উল্লাসে’ স্লোগানে বের হয় শোভাযাত্রা। এটি গিয়ে শেষ হয় সিআরবির শিরীষতলায়। পরে সেখানে বসে আলোচনা সভা আর বাউলগানের আসর। এ উৎসবে অংশ নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম থেকে ৪৯তম ব্যাচের প্রায় সাড়ে আট হাজার শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেন। তাঁদের মধ্যে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী আজকের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন।

শোভাযাত্রায় হাঁটতে হাঁটতে কথা হয় ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নজরুল ইসলামের সঙ্গে। বর্তমানে হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের এই শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভবিষ্যতের টানে পৃথক হয়ে গিয়েছিল আমাদের গন্তব্য। বন্ধুদের সঙ্গে দেখাদেখিও সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছিল ফেসবুক কিংবা হোয়াটসঅ্যাপের পর্দাতেই। পুনর্মিলনীতে এসে সেই হারিয়ে যাওয়া বন্ধুদের খুঁজে পেলাম।’

পুনর্মিলনীতে বন্ধুদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন চতুর্থ ব্যাচের নাজমা ইসলামও। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছি তা–ও চার দশকের বেশি সময় হবে। এত বছর পর আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে। সবার সঙ্গে দেখা হচ্ছে। আবেগতাড়িত হয়ে পড়ছি।

বিকেল চারটা থেকেই প্রবীণ শিরীষ গাছগুলোর নিচের চারপাশের একেকটা সিঁড়িতে বসে একেক ব্যাচের আড্ডা। হারিয়ে যাওয়া বন্ধুদের খুঁজে পেয়ে অনেকেই গেয়ে ওঠেন কবীর সুমনের সেই বিখ্যাত গান, ‘বন্ধু কী খবর বল, কত দিন দেখা হয়নি’। অনেকে আবার নেচে-গেয়ে মাতিয়ে রাখেন সারাক্ষণ।

সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে শুরু হয় বাউলগানের আসর। এই আসরের উদ্বোধন করতে গিয়ে সাংসদ ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, ‘এমন দিন জীবনে সব সময় আসে না। তাই ইতিহাসের অংশ হতে সব কাজ সেরে ছুটে এলাম।’

এর আগে হয় সংক্ষিপ্ত আলোচনা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার তাঁর বক্তব্যে সবাইকে প্রাণের উচ্ছ্বাসে মাতার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘শুধু দেশ থেকে নয়, দেশের বাইরে থেকেও অনেকে ভালোবাসার টানে ছুটে এসেছেন। সবাই আমাদের ভালোবাসা গ্রহণ করুন।’

অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাবেক মুখ্য সচিব আবদুল করিম বলেন, ‘তিনটি উদ্দেশ্য নিয়ে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সৃষ্টি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীর জন্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এবং মানবতার জন্য কাজ করব।’

অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম বলেন, ‘দুদিন শুধু আমাদের মধ্যে গান হবে, আড্ডা হবে। শুধু প্রাণের উচ্ছ্বাসে মাতব উল্লাসে।’

পুনর্মিলনী উদ্‌যাপন পরিষদের সদস্যসচিব গিয়াস উদ্দিনের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন পরিষদের আহ্বায়ক আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। আড্ডা-স্মৃতিচারণা আর গান-নৃত্যে বাড়তে থাকে সময়ের বয়স। একটা সময় ঘড়ির কাঁটা পৌঁছে যায় রাত আটটার ঘরে। এর মধ্যেই শেষ হয় প্রথম দিনের আয়োজন। আগামীকাল শুক্রবার নগরের জিইসি কনভেনশন সেন্টারে দিনব্যাপী চলবে শেষ দিনের আয়োজন।