গণশুনানিতে অভিযোগ, তিনজনের সম্পদ অনুসন্ধান করবে দুদক

দুদকের গণশুনানিতে এক ভুক্তভোগী অভিযোগ তুলে ধরছেন। সদর উপজেলা মিলনায়তন, মাগুরা, ২১ নভেম্বর। ছবি: প্রথম আলো
দুদকের গণশুনানিতে এক ভুক্তভোগী অভিযোগ তুলে ধরছেন। সদর উপজেলা মিলনায়তন, মাগুরা, ২১ নভেম্বর। ছবি: প্রথম আলো

মাগুরায় গণশুনানিতে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তিনজনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ বৃহস্পতিবার সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

অভিযুক্ত তিনজন হলেন মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের স্টোরকিপার গৌতম কুমার, সাবরেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক মোহন লাল রায় ওরফে খোকন ঠাকুর ও বিআরটিএকেন্দ্রিক দালাল সদর উপজেলার সাতদোহা পাড়ার গুরুদাস। তাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) শেখ মইন উল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে দুদক জানায়, ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আগে থেকেই অনুসন্ধান চলছে।

এসব অভিযোগ যাঁরা করেছেন, তাঁরা কেউ নিজেদের নাম প্রকাশ করেননি। গণশুনানিতে তাঁদের লিখিত অভিযোগ পড়ে শোনান জেলা প্রশাসক আশরাফুল আলম। অভিযোগ শুনে ও উপস্থিত জনগণের মতামতের ভিত্তিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালানোর নির্দেশ দেন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ও বিচারকের ভূমিকায় থাকা দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার (অনুসন্ধান) মো. মোজাম্মেল হক খান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিযোগপত্রে বলেছেন, দলিল লেখক মোহন লাল সাধারণ মানুষকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করেন। তিনি সাবরেজিস্ট্রারের নাম ভাঙিয়ে ১৬ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ আদায় করেন। তাঁর হুমকি-ধমকির কারণে কোনো সাবরেজিস্ট্রার দলিলে ভুল ধরতে চান না। এভাবে তিনি কয়েক কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। সদর উপজেলার বাটিকাডাঙ্গা গ্রামে তাঁর একটি বিলাসবহুল বাড়ি ও ভারতে তিনটি বাড়ি আছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন চিঠিতে বলেছেন, মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের স্টোরকিপার গৌতম কুমার প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী সরকারি ওষুধ না দিয়ে বাইরে গ্রামের ছোট ছোট ফার্মেসিতে বিক্রি করছেন।

এই অভিযোগকারী আরও বলেছেন, হাসপাতালের প্রধান অফিস সহকারী মোসলেম উদ্দিন কেনাকাটায় ভয়ংকর দুর্নীতি ও ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে দুর্নীতি করছেন। মাগুরা শহরে তাঁর কয়েকটি বাড়ি ও কোটি টাকার সম্পদ আছে।

আরেকটি অভিযোগে বলা হয়েছে, সাতদোহা পাড়ার গুরুদাসের মাধ্যমে বিআরটিএর যেকোনো অনিয়ম করা সম্ভব। তিনি একবার ধরা পড়ে সাজাও ভোগ করেছেন। অনিয়ম করে তিনি বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। সাতদোহা পাড়ায় ৩০ শতক জমির ওপর বাড়ি ও বেশ কয়েকটি বাস-ট্রাক করেছেন। অবশ্য গণশুনানিতে মাগুরা বিআরটিএর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাহাফুজুর রহমান বলেছেন, গুরুদাস নামে তাঁর অফিসে কেউ কাজ করেন না।

সরকারি সেবা ও সুবিধাদি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে উদ্ভূত সমস্যাদি শ্রবণ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই গণশুনানির আয়োজন করা হয়েছে।

দুদকের গণশুনানিতে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ধান-চাল সংগ্রহ থেকে শুরু করে নানাভাবে তাঁরা দুর্নীতি করেন বলে অভিযোগ ওঠে। অভিযোগে বলা হয়, জেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রক মইন উল ইসলাম পছন্দমতো মিলারদের নিয়োগ করে তাঁদের কাছ থেকে ১ শতাংশ হারে ঘুষের বিনিময়ে খাদ্য কেনেন। এ ছাড়া কারাগারে পচা গম সরবরাহে তিনি সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ আছে। বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক এই কর্মকর্তার খুলনায় তিনটি বাড়ি ও প্রায় ৫০ একর জমি এবং দুটি মার্কেট আছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আগে থেকেই অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।