'গলার কাঁটা' গোলাপগঞ্জ

সম্মেলন হয়েছিল ১৪ বছর পর। কিন্তু শান্তিপূর্ণ সম্মেলন শেষে কাউন্সিল অধিবেশনে গোল বাধে। ভোটে নেতা নির্বাচনের দাবিতে এক পক্ষ অবরুদ্ধ করে রাখে নেতাদের। এ অবস্থায় কমিটি গঠন আর হয়নি। ১৪ নভেম্বর এই ঘটনার পরদিন জেলার নেতারা বিষয়টি সুরাহা করতে গিয়ে আর পারেননি। জেলা আওয়ামী লীগের ‘গলার কাঁটা’ হয়ে থাকা গোলাপগঞ্জ উপজেলা শেষ পর্যন্ত কমিটিবিহীন রেখেই হচ্ছে জেলা সম্মেলন।

আগামী ৫ ডিসেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। গত বুধবার রাতে সর্বশেষ পর্যায়ের জেলা শাখার কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়। এরপর জেলার ১৩ উপজেলা ও তিনটি পৌর কমিটির মধ্যে সাতটি উপজেলা, তিনটি পৌর শাখার নতুন কমিটি গঠন বিষয়টি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। বাকি ছয়টি উপজেলার কমিটি চলতি সপ্তাহের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে সভা থেকে জানানো হয়। কিন্তু গলার কাঁটা হয়ে থাকা গোলাপগঞ্জ উপজেলার বিষয়টি নিয়ে আর স্থানীয় নেতারা ভাবছেন না। এই কমিটি নিয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন তাঁরা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাংসদ নুরুল ইসলাম নাহিদের নির্বাচনী এলাকার একটি উপজেলা গোলাপগঞ্জ। স্থানীয় সাংসদ হিসেবে তিনি ১৪ নভেম্বর গোলাপগঞ্জ ও ১৫ নভেম্বর বিয়ানীবাজার উপজেলা সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। সাংসদ নাহিদের সামনেই গোলাপগঞ্জের ভোটে নেতা নির্বাচনের দাবিতে কাউন্সিল পণ্ড হয়। পরদিন বিয়ানীবাজারে অবশ্য ভোটাভুটির মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।

দলীয় সূত্র জানায়, বিয়ানীবাজারের পর গোলাপগঞ্জ উপজেলা কমিটি গঠনের আরেক দফা উদ্যোগ নিয়েও নতুন কমিটি গঠন আর হয়নি। এরপর গোলাপগঞ্জকে কমিটিবিহীন রেখেই জেলা সম্মেলনের সিদ্ধান্ত হয়। কেন্দ্রে বিষয়টি সরাসরি নুরুল ইসলাম নাহিদই অবহিত করেছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সুজাত আলী রফিক গতকাল বৃহস্পতিবার গোলাপগঞ্জ নিয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গোলাপগঞ্জ বাদে বাকি সব উপজেলা ও পৌর শাখার কমিটি পুনর্গঠন সম্ভব হয়েছে। কিন্তু গোলাপগঞ্জ নিয়ে আর আমরা ভাবছি না। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত এলে পরে বিষয়টি নিয়ে ভাবা হবে। বলা যায়, গোলাপগঞ্জ কমিটিবিহীন অবস্থায় রেখে জেলা সম্মেলন হবে।’

সিলেটে ২০০৫ সালে জেলা সম্মেলন করে কমিটি গঠিত হয়েছিল। ২০১১ সালে সম্মেলন ছাড়াই কমিটি গঠন হয়। এই হিসেবে সিলেটে সম্মেলন নেই প্রায় ১৪ বছর। গত ২ অক্টোবর কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে বর্ধিত সভায় জাতীয় সম্মেলনের আগে জেলা সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত হলে দ্রুত উপজেলা কমিটিগুলো পুনর্গঠনের তাগাদা দেওয়া হয়। ৩১ অক্টোবর থেকে উপজেলা সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত হলে সিলেটের বালাগঞ্জ দিয়ে শুরু হয় উপজেলা সম্মেলন ও কমিটি পুনর্গঠন কার্যক্রম।

এদিকে বুধবার রাতে জেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ পর্যায়ে অনুষ্ঠিত কার্যকরী সভায় সিলেটের সাতটি উপজেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদনপ্রাপ্ত উপজেলাগুলো হচ্ছে ওসমানীনগর, বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ। এর আগে তিনটি পৌর কমিটি ও বিশ্বনাথ উপজেলা কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। অনুমোদন পাওয়ার তালিকায় রয়েছে বিয়ানীবাজার। চলতি সপ্তাহের মধ্যে সিলেট সদরসহ বাকি উপজেলার কমিটি গঠন করে ৫ ডিসেম্বর সম্মেলনের আগে কমিটি অনুমোদন দেওয়া হবে বলে সভায় জানানো হয়। জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লুৎফুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীর সঞ্চালনায় সভায় কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহউদ্দিন সিরাজ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে জেলার ত্রিবার্ষিক সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়। জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতিকে আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদককে সদস্যসচিব নির্বাচিত করে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়।