নওগাঁয় অভ্যন্তরীণ রুটে বাস ধর্মঘট সপ্তম দিনে

নওগাঁ শহরের বালুডাঙ্গা বাস টার্মিনাল। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায়। ছবি: ওমর ফারুক
নওগাঁ শহরের বালুডাঙ্গা বাস টার্মিনাল। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায়। ছবি: ওমর ফারুক

নওগাঁয় অভ্যন্তরীণ সব রুটের বাস ধর্মঘট আজ শুক্রবার সপ্তম দিনে গড়াল। গত বুধবার জেলা প্রশাসকের সঙ্গে স্থানীয় বাসমালিক ও শ্রমিকদের বৈঠক এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাসের পরও অঘোষিত ধর্মঘট প্রত্যাহারে কোনো উদ্যোগ নেই। এতে দুঃসহ দুর্ভোগে পড়েছে যাত্রীরা।

আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নওগাঁ বালুডাঙ্গা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, টার্মিনালে দেড় শ থেকে দুই শ বাস সারি করে রাখা আছে। কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। যাত্রীরা দাঁড়িয়ে আছে। কেউ কেউ ঝুঁকি নিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে গন্তব্যে যাচ্ছে। তবে নওগাঁ-ঢাকা বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বাস কাউন্টারগুলোর সামনে থেকে নিয়মিত বাস ছেড়ে যাচ্ছে।

ঢাকা বাস টার্মিনালে এসআর পরিবহন কাউন্টারের সামনে কথা হয় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত শহিদুল ইসলামের সঙ্গে। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘অফিসের কাজে জরুরি ভিত্তিতে দুপুরের মধ্যে ঢাকা অফিসে যাওয়া দরকার। অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ১০০ টাকা বেশি ভাড়া দিয়ে সিএনজিতে করে নওগাঁ-ঢাকা বাস টার্মিনালে আসতে হলো। এক সপ্তাহ ধরে ধর্মঘট চলছে। এটা কি মগের মুল্লুক হয়ে গেল। মানুষকে জিম্মি করে এ ধরনের আন্দোলন আর কত দিন চলবে?’

বালুডাঙ্গা বাস টার্মিনালে দুই মেয়েকে নিয়ে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া ঠিক করার জন্য চালকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন শিউলী আক্তার। তিনি বলেন, ‘নিয়ামতপুরে বাবার বাড়িতে যাওয়ার জন্য বাস টার্মিনালে এসে দেখি বাস চলাচল বন্ধ। এখন সিএনজি কিংবা ইজিবাইকই একমাত্র ভরসা। কিন্তু ভাড়া চাইছে দ্বিগুণেরও বেশি। বাসে গেলে যেখানে আমাদের তিনজনের ১৪০ টাকা লাগত, সেখানে এখন ৬০০ টাকা সিএনজি ভাড়া চাইছে।’

নওগাঁ বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, ‘আমরা বাসমালিকেরা রাস্তায় গাড়ি নামাতে চাই। কিন্তু চালকদের কোনোভাবেই রাজি করানো যাচ্ছে না। তাঁদের একটাই দাবি, কার্যকর হওয়া নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত গাড়ি চালাবেন না।’

জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে নেতারা শ্রমিকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে গাড়ি চালানোর আহ্বান জানানোর পরও শ্রমিকেরা তা মানছেন না। গত বুধবার জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বাসমালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের বৈঠক হয়। এরপর টার্মিনালে গিয়ে চালকদের বাস চালানোর কথা বললে তাঁরা কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার কথা জানান। কারও অনুরোধেই কোনো কাজ হচ্ছে না।

নওগাঁ-ধামইরহাট রুটে দ্রুতি বাসের চালক রিপন সরদার বলেন, ‘আমরা চালকেরা কেন্দ্রীয় কিংবা স্থানীয় কোনো নেতার সিদ্ধান্তে বাস চালানো বন্ধ করিনি। তাই তাঁদের কোনো সিদ্ধান্ত আমরা মানব না। সরকার নতুন আইন সংশোধন না করা পর্যন্ত আমরা বাস চালাব না।’

জেলা প্রশাসক হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘গত পরশু (বুধবার) পরিবহন মালিকপক্ষ ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে আমার বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে তাঁরা গাড়ি চালানোর প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু তারপরও কেন বাস চালাচ্ছেন না, বিষয়টি বোধগম্য হচ্ছে না। এ বিষয়ে আবারও তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হবে।’