তাঁদের স্বপ্নযাত্রা কি থেমে যাবে?

আবু ছাইম ও খাদেমুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
আবু ছাইম ও খাদেমুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

খাদেমুল ইসলামের মা নেই। বোন মানসিক ভারসাম্যহীন। দিনমজুর বাবাও অসুস্থ। টিউশন করে লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছেন। আবু ছাইমের বাবাও দিনমজুর। তিনি দিনমজুরি করে যে টাকা আয় করেন, তা দিয়ে ছয় সদস্যের সংসার চলে না। তাই তিনি লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবার সঙ্গে দিনমজুরিও করেন।

খাদেমুল ও ছাইম এবার একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছেন। কিন্তু টাকার অভাবে তাঁরা ভর্তি হতে পারছেন না। তাহলে কি তাঁদের স্বপ্নযাত্রা এখানেই থেমে যাবে?

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের রহিমাপুর গ্রামে খাদেমুলের বাড়ি। ১০ বছর আগে তাঁর মা মারা গেছেন। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট। বোন ময়না খাতুন (২৬) নামের এক বোন মানসিক ভারসাম্যহীন। দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। বাবা আবদুর রাজ্জাক (৫৮) হৃদরোগে আক্রান্ত। তাঁরা বাবা অন্যের জমিতে দিনমজুরি করে যা পান, তা দিয়ে ঠিক দুবেলারও খাবার জোটাতে পারেন না।


দারিদ্র্যের মধ্যেও দমে যাননি খাদেমুল। টিউশন করে পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। তিনি ২০১৭ সালে এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৪ দশমিক ৭৭ ও ২০১৯ সালে রংপুর সরকারি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ‘বি’ ইউনিটে মেধা তালিকায় ৭৬৫তম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এ’ ইউনিটে মেধা তালিকায় ১৩৯তম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সি’ ইউনিটে মেধা তালিকায় ৩৭তম ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাতালিকায় ‘বি’ ইউনিটে ১০৮তম হয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চান খাদেমুল। ভর্তি হতে ১৫-১৬ হাজার টাকা লাগবে বলে শুনেছেন তিনি। কিন্তু এত টাকা তাঁর দরিদ্র বাবার পক্ষে দেওয়া অসম্ভব। তাই পড়ার খরচ ও ভর্তির টাকা জোগানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।

খাদেমুলের বাবা রাজ্জাক বলেন, ‘মোর পাঁচ শতক বসতভিটে ছাড়া কিছু নাই। মোর হাডের রোগ জোরের কাম করির পাও না। তাও কাম করি যেকনা আয় হয়, তাক পাগলি বেটিটার চিকিৎসা করতে শেষ হয়। বেটাটাক খরচ দিবার পাও না। অয় (ছেলে) মাইনসের ছাওয়াক পড়ে নিজে পড়ছে। এ্যালা বড় কলেজোত ভর্তি হবার চান্স পাইছে। কিন্তুক ছাওয়াটাক ওটে কোনা পড়ার মোর সামর্থ্য নাই।’

তারাগঞ্জের ইকরচালী ইউনিয়নের জগদীশপুর সরকারপাড়া গ্রামে আবু ছাইমের বাড়ি। শিক্ষক ও জনপ্রতিনিধিরা জানান, ছাইমের চার ভাইবোনের মধ্যে তিনজন লেখাপড়া করেন। তাঁদের সহায় সম্বল বলতে চার শতক বসতভিটার ওপর দুটি টিনের ও একটি খড়ের ঘর। বাবা ছাবেদ আলী অন্যের বাড়িতে দিনমজুরি করেন। এ আয় দিয়ে দুবেলার খাবারও জুটে না। বাবার সঙ্গে দিনমজুরি করে পড়ার খরচ চালিয়ে আবু ছাইম ২০১৭ সালে বিজ্ঞান বিভাগে ইকরচালী উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৪ দশমিক ২৩ ও ২০১৯ সালে ইকরচালী ডিগ্রি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪ দশমিক ৩৩ পেয়েছেন। এ বছর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ‘এ’ ইউনিটে মেধা তালিকায় ২৩২তম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘এ’ ইউনিটে ৯১১তম স্থান অধিকার করেছেন।

আবু ছাইম বলেন, ‘আমাদের কোনো জমিজমা নেই। বাবা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। সে আয়ে সংসার চলে না। বাবার সঙ্গে কাজ করে পড়ার খরচ চালিয়ে এ পর্যন্ত এসেছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও পড়ার খরচ নিয়ে এখন খুব দুশ্চিন্তায় আছি। আমার দিনমজুর বাবার পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ দেওয়া অসম্ভব।’

আবু ছাইমের বাবা বলেন, ‘মোর সউগ ছাওয়ার মেধা আছে। কিন্তু মুই ওমাক তো ঠিকমতো খাবার পড়ার খরচ দিবার পাও না। ছাইমোক ফির ভার্সিটিত পড়ার খরচ পাইম কোনটে।’

ইকরচালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ও কুর্শার ইউপি চেয়ারম্যান আফজালুল হক জানান, অভাবী পরিবারের সন্তান খাদেমুল ও আবু ছাইম মেধাবী। সমাজের সহৃদয় ও বিত্তবান ব্যক্তিরা যদি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন, তাহলে তাঁরা বিশ্ববিদ্যায়ে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারবেন।

সহৃদয়বান ব্যক্তিরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে যোগাযোগ করুন:
খাদেমুল ইসলাম- ০১৭৫৫৩২৮৭৮০
আবু ছাইম- ০১৭৪০২০০২০৬