পুলিশের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফরম জমা দিতে মোটরসাইকেল চালকদের দীর্ঘ লাইন। গতকাল হালুয়াঘাট থানা চত্বরে।  ছবি: প্রথম আলো
শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফরম জমা দিতে মোটরসাইকেল চালকদের দীর্ঘ লাইন। গতকাল হালুয়াঘাট থানা চত্বরে। ছবি: প্রথম আলো

থানার প্রধান ফটক থেকে সারিবদ্ধভাবে দীর্ঘ তিনটি লাইন। তাতে শত শত লোক হাতে ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফরম নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। লাইন পেরোতেই থানার সামনে একটি লম্বা টেবিলে বসে টাকা আর ফরম জমা নিচ্ছেন ছয়জন পুলিশ সদস্য। পাশেই দাঁড়িয়ে নিয়ম রক্ষা করে এগিয়ে আসার জন্য মাইকে ঘোষণা দিচ্ছেন হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (এসএসপি) মো. আলমগীর।

গত বুধবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থানা চত্বরে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে। অন্য দিনের চেয়ে থানার পরিবশেটা ছিল অনেক বেশি কোলাহলপূর্ণ।

পুলিশের ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগে লাইসেন্সের ফরম জমা দিতে এসে সবাই সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কারও মুখে বিরক্তির ছাপ নেই। বরং তাঁরা দারুণ খুশি। বুধবার থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পুলিশের সহযোগিতায় তিন হাজার চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্সের লার্নার পেতে ফরম জমা নেওয়া হয়েছে।

পুলিশ ও ফরম জমা দিতে আসা কয়েকজন চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সড়ক আইন মেনে চলতে উপজেলার ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলচালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন করতে ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরে যেতে হয়। এতে চালকদের একটা দিন এ কাজে ব্যয় হয়। কাজটি সহজ করতে এএসপি আলমগীর হালুয়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার বিশ্বাসকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলচালকদের বিনা মূল্যে ১৫০টি ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন ফরম দেন।

বিষয়টি এলাকায় প্রচার পাওয়ায় এএসপির কার্যালয় থেকে গত এক সপ্তাহে ৭৫০টি ফরম দেওয়া হয়েছে। এই ফরম ফটোকপি করে প্রায় তিন-চার হাজার চালক নেন। গত বুধবার সকাল ১০টায় ফরম জমা নেওয়া কার্যক্রম শুরু হয়ে চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। এদিন ১ হাজার ৬০৪টি আবেদন জমা নেওয়া হয়। গতকাল সকাল আট থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আরও দেড় হাজার চালক ফরম পূরণ করে জমা দিয়েছেন। এ সময় চালকদের কাছ থেকে ৪৫০ টাকা নেওয়ার রসিদ ও ক্রমিক নম্বর দেওয়া হয়।

এএসপি আলমীর জমা পড়া ফরম ও টাকা ময়মনসিংহ বিআরটিএ কার্যালয়ে জমা দেবেন। পরে ক্রমিক অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে ময়মনসিংহ বিআরটিএ কার্যালয় থেকে শিক্ষানবিশ (লার্নার) লাইসেন্স দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে এএসপি আলমগীর তাঁর ফেসবুক আইডিতে জানিয়ে দেবেন।

লাইনে দাঁড়িয়ে মোটরসাইকেলচালক আবদুল কালাম বলেন, ‘আমরা লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, কিন্তু কারও কোনো বিরক্তি নেই। কারণ, কত সহজে আমরা কোনো ঝামেলা ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্সের লার্নার পাব। এটা খুবই আনন্দের বিষয়।’

পৌরসভার মেয়র খাইরুল আলম ভূঁইয়া বলেন, লাইসেন্স পেতে একজন নাগরিককে অনেক কষ্টের শিকার হতে হয়। কিন্তু পুলিশের উদ্যোগে এ কাজটি নাগরিকদের জন্য খুব সহজ করে দেওয়া হয়েছে। এলাকায় এ ধরনের কাজের জন্য পুলিশ ব্যাপক প্রশংসা পাচ্ছে।