তালিকা চূড়ান্ত হয়নি, ঝুলে গেল ধান কেনা

রাজশাহীতে আমন মৌসুমে সরকারিভাবে গত বুধবার থেকে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার কথা ছিল। কিন্তু কৃষকের তালিকা চূড়ান্ত না হওয়ায় লটারি করা হয়নি। এ কারণে ধান কেনাও শুরু করা যায়নি।

রাজশাহী জেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার রাজশাহীতে রোপা আমন মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে ৮ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন ধান কেনা হবে। সরকারিভাবে ধানের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪০ টাকা মণ। ২০ নভেম্বর থেকে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এটা চলবে। কিন্তু বাজারে এখন নতুন ধান বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা মণ দরে। রাজশাহীতে উৎপাদিত ধানের ১ দশমিক ৯৫ ভাগ ধান কেনা। তাই কৃষক বাছাইয়ের জন্য লটারি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এই ক্রয় কমিটির সভাপতি। তাঁরা লটারি করে কৃষকের সংখ্যা নির্ধারণ করবেন। আমন মৌসুমে যে কৃষকের কাছ থেকে সরকারিভাবে ধান কেনা হবে, বোরো মৌসুমে তাঁর কাছ থেকে আর কেনা হবে না।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সামছুল হক জানান, এবার রাজশাহীতে রোপা আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭৪ হাজার ৯৮১ হেক্টরে। চাষ হয়েছে ৭৬ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমিতে। তাঁদের প্রত্যাশা, রাজশাহীতে এবার ধানের ফলন হবে ৪ লাখ ১৭ হাজার ৬০ মেট্রিক টন। এই উৎপাদনের বিপরীতে কেনা হবে মাত্র ৮ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন। আর রাজশাহীতে প্রায় পৌনে দুই লাখ কৃষক এবার আমন ধান চাষ করেছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে গোদাগাড়ী উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ধান চাষ হয়ে থাকে। উপজেলায় এবার ধান উৎপাদিত হবে ১ লাখ ৩২ হাজার ৯৭৫ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে সরকারিভাবে কেনা হবে ২ হাজার ৫৯৮ মেট্রিক টন ধান। ধান উৎপাদনে দ্বিতীয় অবস্থানে তানোর উপজেলা। সেখানে এবার ১ লাখ ২২ হাজার ৮৫৬ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হবে। এর বিপরীতে সরকারিভাবে কেনা হবে ২ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন। পবা উপজেলায় ৫০ হাজার ৫৯৭ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। এখান থেকে কেনা হবে ৯৮৯ মেট্রিক টন।

গোদাগাড়ী উপজেলার কৃষক নাজমুল হক জানান, তিনি কোনো বছরই সরকারিভাবে ধান বিক্রি করার সুযোগ পান না। কখন সময় হয় বুঝতেই পারেন না। কয়েকবার গিয়ে জেনেছেন সময় পার হয়ে গেছে। এবারও তিনি জানতে পারেননি কবে থেকে সরকারিভাবে ধান কেনা শুরু হবে। তিনি বলেন, সরকারি দাম আর স্থানীয় বাজারের দামের মধ্যে অনেক তফাত। সরকারি ক্রয়ের পরিমাণ আরও না বাড়ালে বাজারের এর কোনো প্রভাব পড়বে না।

এ উপজেলার প্রসাদপাড়া গ্রামের কৃষক আনসার আলী জানান, স্থানীয় বাজারে স্বর্ণা ধান (মোটা) ৫০০ টাকা ও জিরাশাইল (চিকন ধান) ও অন্যান্য ধান ৭০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। সরকারিভাবে কবে, কখন ধান কেনা হয়, বিষয়টি তাঁরা জানতেই পারেন না। ফলে তাঁরা সরকারি খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করার সুযোগ পান না।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সামছুল হক বলেন, নতুন ধান স্থানীয় বাজারে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যেটা আগের চেয়ে ভালো। এত অল্প পরিমাণে হলেও সরকারিভাবে ধান কেনা শুরু হলে বাজারের ওপরে প্রভাব পড়বে। গতকাল বুধবার পর্যন্ত তাঁদের ৪২ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। তিনি বলেন, এবার বৃষ্টির কারণে চাষির ধানের উৎপাদন খরচও কম হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে।

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা খাদ্য কর্মকর্তা নাজমুল হক ভূঁইয়া বলেন, কৃষকদের তালিকা চূড়ান্ত না হওয়ার জন্য প্রথম দিনে সরকারিভাবে ধান ক্রয় করা সম্ভব হয়নি।