পানি আটকে মাছ শিকার রবিশস্য আবাদ ব্যাহত

চলনবিলের পানি আটকে সুতিজাল পেতে অবাধে মাছ শিকার করা হচ্ছে। দ্রুত পানি নামতে না পারায় সরিষা, গম, ভুট্টাসহ অন্য রবিশস্য আবাদও ব্যাহত হচ্ছে। গতকাল নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিলশা এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
চলনবিলের পানি আটকে সুতিজাল পেতে অবাধে মাছ শিকার করা হচ্ছে। দ্রুত পানি নামতে না পারায় সরিষা, গম, ভুট্টাসহ অন্য রবিশস্য আবাদও ব্যাহত হচ্ছে। গতকাল নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিলশা এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

নাটোরের গুরুদাসপুরে চলনবিলের পানি আটকে সুতিজাল পেতে অবাধে মাছ শিকার করা হচ্ছে। মাছ ধরার কারণে দ্রুত পানি নামতে না পারায় সরিষা, গম, ভুট্টাসহ অন্য রবিশস্য আবাদও ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের সুতিজাল উচ্ছেদে গড়িমসি করছে প্রশাসন। উপজেলার খুবজীপুর ইউনিয়নের বিলশা এলাকার বিলেও সুতিজাল পাতা হয়েছে।

কৃষি বিভাগ বলছে, সুতিজালের কারণে নাটোরের গুরুদাসপুর, সিংড়া ও ভাটির সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা এলাকায় প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে ছিটিয়ে বোনা সরিষা, গম, কালাইসহ রবিশস্য আবাদ করতে পারছেন না কৃষক।

অথচ গত ১ অক্টোবর থেকে রবিশস্যের মৌসুম শুরু হয়েছে। বিলম্বের কারণে এ আবাদ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন চলনবিলের কৃষকেরা।

গত বুধবার ঘুরে দেখা গেছে, চলনবিলের পানি নামার উৎসমুখ মরা-আত্রাই নদের মাঝবরাবর মো. রওশন আলী, সেলিম হোসেন, আফজাল হোসেনসহ কমপক্ষে ছয় ব্যক্তি বাঁশ পুঁতে বেড়ায় পলিথিন যুক্ত করে শত শত বালুর বস্তা ফেলেছেন। মাঝে ফাঁকা জায়গায় পেতেছেন সুতিজাল। এ কারণে পানি নিচের দিকে নামছে ধীর গতিতে।

পাশাপাশি উজানে সিংড়া উপজেলার আত্রাই নদ ও চলনবিলে এবং ভাটির তাড়াশ উপজেলার চলনবিলেও একই পন্থায় কমপক্ষে ১৫টি সুতিজাল পেতে মাছ শিকার করা হচ্ছে। এসব সুতিজাল–মালিকদের দাবি, পানির সঙ্গে নানা প্রজাতির মাছ চলে যাচ্ছে। এসব মাছ ধরতে না পারলে এলাকায় মাছের সংকট হবে। মাছের চাহিদা পূরণ করছেন তাঁরা। এটা সত্য, এতে রবি ফসলের সামান্য ক্ষতি হবে। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ‘ম্যানেজ’ করেই কাজটি করছেন তাঁরা।

এলাকার কমপক্ষে ২০ জন কৃষক প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেন, বর্ষায় বিস্তীর্ণ চলনবিল পানিতে তলিয়ে থাকে। অক্টোবরের শুরুতেই পানি নেমে যায়। পলি পড়ে থাকা জমিতে সরিষা, গম, কলাইয়ের আবাদ ভালো হয়। খরচ হয় না বললেই চলে। কিন্তু এ বছর নভেম্বর শেষ হতে চললেও সুতিজালের কারণে খেতে ফসল ফলাতে পারছেন না হাজার হাজার কৃষক। ফলে রবিশস্য নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন তাঁরা।

গুরুদাসপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. আবদুল করিম জানান, সমস্যাটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তমাল হোসেনকে জানানো হয়েছে। তাড়াশ ও সিংড়া উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা একই ধরনের মন্তব্য করেন। তাঁরা বলেন, ২০১০ সাল থেকে চলনবিলে ছিটিয়ে বোনা সরিষার আবাদের চলন শুরু হয়। এলাকার কৃষকেরা এতে লাভবান হচ্ছেন। এসব সরিষার ফুলকে ঘিরে শত শত মৌমাছি বসায় মধু আহরণ করেও অনেকে লাভবান হন। এ বছর তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

তমাল হোসেন জানান, দুই দফা অভিযান চালিয়ে ছয়টি সুতিজাল উচ্ছেদ করা হয়েছে। তবে অভিযানের পর আবার জাল বসানো হয়। সুতিজাল পেতে মাছ শিকারের পেশাটি অধিক লাভজনক হওয়ায় প্রশাসনকে আমলে নিচ্ছেন না কেউ। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আলমগীর কবির বলেন, জনবল–সংকটের কারণে মাসজুড়ে অভিযান করা যায় না। তা ছাড়া অভিযান পরিচালনা করার জন্য আর্থিক বরাদ্দও সীমিত।