জনসংখ্যা নীতি নিয়ে বিভ্রান্তিতে দেশ

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সাফল্য আছে। তবে বর্তমানে এই খাত লক্ষ্য অর্জনে অনেকখানি পিছিয়ে পড়েছে। জনসংখ্যার চাপ দিন দিন তীব্র হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনসংখ্যা নীতি নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েছে বাংলাদেশ।

‘জনসংখ্যার উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন: কৌশলকে কাজে রূপান্তর’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে এ বৈঠক যৌথভাবে আয়োজন করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি), অপসানস্, যুক্তরাজ্যের দাতা সংস্থা ইউকেএইড, হুইস টু অ্যাকশন এবং ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার। অনুষ্ঠানে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, গবেষক, জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক, দাতা সংস্থার প্রতিনিধি ও এনজিও প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

সূচনা বক্তব্যে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, সরকার জনসংখ্যার কোন বার্তা জনসাধারণকে দেবে, তা নিয়ে বিভ্রান্তিতে আছে। মাতৃমৃত্যু সমস্যা সমাধানের পন্থা কমিউনিটিভিত্তিক হবে, নাকি প্রতিষ্ঠানভিত্তিক হবে, তা নিয়ে সরকার স্পষ্ট বক্তব্য দিচ্ছে না। সরকারের কেউ মনে করে, বাড়তি জনসংখ্যা দেশের জন্য কোনো সমস্যা না। অনেকে মনে করে, দেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা জনসংখ্যা। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১০টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ বিল্‌লাল হোসেন বলেন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি বিষয়। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের অনেক উদ্দেশ্যই পূরণ হয়নি। ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও তালগোল পাকানোর পরিস্থিতি। সরকার ঠিক কোথায় জোর দিচ্ছে, তা স্পষ্ট নয়। অনুষ্ঠানে একাধিক আলোচক সময়মতো জনসংখ্যাসহ মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যবিষয়ক পরিসংখ্যান এবং উপাত্ত যথাসময়ে প্রকাশ করার ওপর গুরুত্ব দেন।

>

অনেকে প্রয়োজনের সময় জন্মনিয়ন্ত্রণের সামগ্রী পান না
মোট প্রজনন হার অনেকটা স্থির
মোট প্রজনন হার: ২০১১–২০১৮ পর্যন্ত ২.৩
বছরে ৫৩ লাখ গর্ভধারণ, ৪৮% অনাকাঙ্ক্ষিত
প্রতি লাখ জীবিত জন্মে ১৭৬ জন মায়ের মৃত্যু
২০৩০ সালে ৭০ জনে নামাতে হবে

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য শামসুল আলম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা দলিল তৈরির মুখ্য ভূমিকায় আছেন। জমির আয়তন অনুযায়ী বহনক্ষমতার বেশি জনসংখ্যা এখন দেশে—এমন মন্তব্য করে শামসুল আলম বলেন, সরকার জনসংখ্যার বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ও লক্ষ্য অর্জনে সুনির্দিষ্ট কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। সুতরাং সরকার বিভ্রান্তিতে আছে, এ অভিযোগ সঠিক নয়। দাতা ও এনজিওগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, বেশ কিছু দেশে রেলস্টেশন, সিনেমা হল, সুপার মার্কেটে জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী থাকে। প্রয়োজনে মানুষ তা ব্যবহার করে।

এ মাসে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে জনসংখ্যা বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন শেষ হয়েছে। সেই সম্মেলনে বাংলাদেশ কিছু প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। এ ছাড়া জাতীয় জনসংখ্যা নীতি ও টেকসই অভীষ্টে বেশ কিছু লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে। এসব প্রতিশ্রুতি ও লক্ষ্য অর্জনে সরকারের সহায়তা করার জন্য এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জনসংখ্যা বিষয়ে একটি সম্মেলন করার চিন্তা করছে আয়োজকেরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম বলেন, সর্বশেষ জনসংখ্যা নীতি হয়েছিল ২০১২ সালে। তাতে ২০১৫ সালে মধ্যে কিছু লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তা হয়নি। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিকে এগিয়ে নিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ের কথা কয়েক দশক ধরে বলা হলেও কোনো সমন্বয় নেই। সুপারিশে তিনি বলেন, মাধ্যমিক বাধ্যতামূলক করলে বাল্যবিবাহ কমবে।

সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানির (এসএমসি) প্রতিনিধি তসলিম হোসেন বলেন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বেসরকারি খাত বড় ভূমিকা রাখছে। এসএমসি একাই প্রয়োজনের ৩৬ শতাংশ জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রীর চাহিদা মেটাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের গুটমেকার ইনস্টিটিউটের গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, দেশে বছরে ৫৩ লাখ গর্ভধারণ হয়। এর মধ্যে ৪৮ শতাংশ গর্ভধারণ অনিচ্ছাকৃত। অনেকে প্রয়োজনের সময় জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী পান না। দেশে মোট প্রজনন হার (টিএফআর) অনেকটা স্থির হয়ে আছে, কমছে না। জন্মনিয়ন্ত্রণের সামগ্রীর ব্যবহার স্থির হয়ে আছে, বাড়ছে না।