জমির জন্য বাবা-মাকে মারধর,ছেলের বিরুদ্ধে বাবার মামলা

ছোট ছেলেকে জমি লিখে দেওয়ায় বাবা-মাকে মারধর করেছে বড় ছেলে—এমন অভিযোগে মামলা করেছেন বাবা আবদুল জব্বার। পুলিশ আজ শুক্রবার বড় ছেলে তরিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে।

গত সোমবার ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার লতিফপুর গ্রামে মারধরের ঘটনাটি ঘটেছে। আহত বাবা বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিয়েছেন।

আবদুল জব্বার ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার একটি উচ্চবিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। তাঁর স্ত্রীর নাম রোকেয়া বেগম।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা রক্তাক্ত এক বৃদ্ধের ছবি দেখে এ প্রতিবেদক গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলার মুশুলি ইউনিয়নের লতিফপুর গ্রামে যান। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, আবুদল জব্বার ও তাঁর স্ত্রী রোকেয়া ঘরের দরজা বন্ধ করে ভেতরে বসে রয়েছেন। ডাকাডাকি করার পর জব্বার দরজা খোলেন। দরজা বন্ধ রাখার কারণ জানতে চাইলে প্রথমে তিনি ও তাঁর স্ত্রী কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

একপর্যায়ে পরিচয় পেয়ে রোকেয়া বেগম বলেন, ‘বাবা কী কইতাম শরমের কতা।’ তিনি বলেন, গত ছয়-সাত মাস আগে তাঁর ছেলে তাঁকে মারধর করেছিল। পরে তিনি ভয়ে পাশের ইন্দারগাতি গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যান। এ ঘটনায় তাঁর স্বামী ওই সময় থানায় অভিযোগ দিয়েছিলেন। পুলিশ বাড়িতে এসেছিল। কিন্তু ছেলে তাঁদের কাছে ক্ষমা চাইলে পরে আর থানা-পুলিশ করতে চাননি।

রোকেয়া বলেন, গ্রামের একটি মহল তাঁর বড় ছেলে তরিকুলকে বাবার কাছ থেকে ভাগের জমি লিখে নেওয়ার জন্য উসকে দিচ্ছে। কিন্তু জমি লিখে দিলেই ওই স্বার্থান্বেষী মহলটি জমি বেহাত করে নেবে। এই আশঙ্কা করে তাঁর স্বামী ছেলেকে জমি লিখে দেয়নি। এটাই বাবা আবদুল জব্বারের অপরাধ। এ কারণে তরিকুল তাঁদের দুজনকে মারধর করে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

বারান্দার লোহার গ্রিলের (বেষ্টনী) ভাঙা অংশ ও দরজায় ঢেউখেলানো দাগ দেখিয়ে আবদুল জব্বার বলেন, ‘আমরা যখন ভয়ে গ্রিল,দরজা আটকে ঘরে বসে থাকি তখন তরিকুল এসব ভাঙচুর করেছে।’ তিনি বলেন, ‘বৃদ্ধ বয়সের আমরা এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে নিস্তার চাই। জমিজমা বেহাত হওয়ার আশঙ্কায় ১৫০ শতক জমি হেবা দলিলের মাধ্যমে ছোট ছেলে রফিকুলের কাছে হস্তান্তর করেছি। আমার জমি আমি কাকে দেব সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার কেবলই আমার। এটা নিয়ে গ্রামের লোকজনের মাথা ঘামানো কী আছে।?’

আবদুল জব্বারের বড় মেয়ে তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘আমি স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় বসবাস করি। আব্বা তাঁর ছোট ছেলে রফিকুল ইসলামকে তাঁর পাওনার চাইতেও বেশি জমি লিখে দিয়ে সমস্যার সূত্রপাত ঘটিয়েছেন। নিজেকে বঞ্চিত মনে করে বড় ভাই তরিকুল ইসলাম ক্ষুব্ধ হয়ে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। যদি পারেন আপনারা (সাংবাদিক) উদ্যোগ নিয়ে এ সমস্যার সমাধান করে দিন।’

আবদুল জব্বারের ছোট ছেলে রফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে দাবি করেন, আব্বা আমাকে জমি কেন লিখে দিলেন তা বলতে পারব না। তাঁর জমি যে কাউকে লিখে দেওয়ার অধিকার রাখেন। তবে সম্পত্তি বেহাত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় আব্বা তাঁর কিছু জমি আমার নামে লিখে দিয়েছেন। যদি আব্বা বলেন আমি সেই জমি ফিরিয়ে দেব। কিন্তু এ কারণে আমার বড়ভাই আব্বা-আম্মার সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করতে পারে না।’ তিনি মনে করেন কেউ তাঁকে উসকানি দিয়ে এসব করাচ্ছে।

বাবা-মাকে নির্যাতন করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তরিকুল ইসলাম। তিনি দাবি করেন, আব্বা জেনে বুঝে আমাকে জমিজমা থেকে বঞ্চিত করে ছোট ভাইকে ১৫০ শতক জমি লিখে দিয়েছেন। আমিসহ চার বোনকে বঞ্চিত করেছেন। এ ধরনের অন্যায়ের প্রতিবাদ করছি আমি।

তাহলে আপনার বাবা আহত হলেন কীভাবে প্রশ্ন করলে তরিকুল বলেন, তিনি গত সোমবার উঠানে থাকা টিনের ওপর পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামলা দায়েরের তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন তরিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।