মাকে দেখতে পেয়েছিলেন জয়ন্তী?

বাস না পেয়ে বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা বিপাকে পড়েন। অন্য যানবাহনের খোঁজে জয়ন্তী রানী ও তাঁর পরিবার। গতকাল সকালে ঠাকুরগাঁও পুরোনো বাসস্ট্যান্ড এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
বাস না পেয়ে বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা বিপাকে পড়েন। অন্য যানবাহনের খোঁজে জয়ন্তী রানী ও তাঁর পরিবার। গতকাল সকালে ঠাকুরগাঁও পুরোনো বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

কোলে এক হাতে শিশু, অন্য হাতে ব্যাগ নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে হাজির জয়ন্তী রানী। তাঁর সঙ্গে আরও দুই শিশু। বাস চলছে না—শুনেই কেঁদে ফেললেন তিনি। তাঁর কান্না দেখে ছোট্ট ছেলে-মেয়েও চোখের জল চেপে রাখতে পারল না। কান্না চোখেই যানবাহন পেতে ছোটাছুটি করতে লাগলেন জয়ন্তী। শেষবার মায়ের মুখটা দেখতে হলে তাঁকে বিকেলের মধ্যে গাইবান্ধায় যেতেই হবে।

গতকাল শুক্রবার ঠাকুরগাঁওয়ে হঠাৎ বাস বন্ধ হওয়ায় এমন বিড়ম্বনায় পড়েন আরও অনেকে। তাঁদের অনেককেই মনঃক্ষুণ্ন হয়ে ফিরে যেতে হয়েছে। কেউ কেউ ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়কে চলাচলনিষিদ্ধ তিন চাকার যানবাহনে করে গন্তব্যে রওনা দেন। তবে জয়ন্তীর ভাগ্যে কী হয়েছে, তা জানা যায়নি।

পরিবহন আইন নিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহারের পর কয়েকটি জায়গায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের একটা অংশ সড়কে চলাচল করা যানবাহনের ওপর হামলা চালান। এতে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় এ জেলায় সকালে বাস বন্ধ করে দেন মালিক-শ্রমিকেরা। সন্ধ্যা সাতটায় এ প্রতিবেদন তৈরি করা পর্যন্ত বাস চালু হয়নি।

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক কে এম কামরুজ্জামান বলেন, বিষয়টি নিয়ে বাসমালিকদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সকালে জেলা শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, টার্মিনালের সীমানাপ্রাচীরের ভেতর সারি করে রাখা বাস। শ্রমিকেরা জটলা করে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন। অনেক যাত্রী বাস না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। জরুরি প্রয়োজনে অনেকে নছিমন, করিমন এবং ডিজেলচালিত থ্রি-হুইলার ও অটোরিকশায় করে গন্তব্যে রওনা দিচ্ছেন।

সালন্দর এলাকা থেকে এসেছিলেন রশনি রানী। তিনি বলেন, মা অসুস্থ হয়ে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাঁকে দেখতে যাওয়ার জন্য বাস ধরতে এসেছেন। এখন ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে যেতে হবে।

এ সময় কথা হয় মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের জেলা সহসাধারণ সম্পাদক রওশন জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য পণ্য পরিবহন বন্ধের ঘোষণা দেয় ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। সেই আন্দোলনে মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সমর্থন থাকলেও অংশগ্রহণ ছিল না। বুধবার দিবাগত রাতে কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন শ্রমিক-মালিকেরা। কিন্তু এ সিদ্ধান্তে অনেক শ্রমিক বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তাঁরা অনেক স্থানে সড়ক-মহাসড়কে চলাচল করা যানবাহনে হামলা চালাতে শুরু করেন। এতে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় আজ (গতকাল) সকাল থেকে ঠাকুরগাঁওয়ের বাস মালিক-শ্রমিকেরা মহাসড়কে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন।

আরশাদ আলী নামের এক যাত্রী বলেন, ‘জরুরি প্রয়োজনে দিনাজপুর যেতে সকালে বের হয়েছি। কাউন্টারে এসে দেখি, বাস বন্ধ। একদিকে সরকার আইন করবে, অন্যদিকে বাসচালকেরা ধর্মঘট করবেন আর ভোগান্তিতে পড়ব আমরা?’

জানতে চাইলে জেলা মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের আহ্বায়ক আবদুল গফুর বলেন, বাস চলাচল বন্ধ রাখার ব্যাপারে তাঁরা সিদ্ধান্ত পাননি। তবে ভাঙচুরের আশঙ্কা থেকে এই এলাকার মালিক-শ্রমিকেরা বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন। সড়কে নিরাপত্তা ফিরে এলে আবার বাস চলাচল শুরু করবে।