মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষায় জাপানসহ তিন দেশ সফরের সিদ্ধান্ত

স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর এসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও স্মৃতি রক্ষার বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে জাপান, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া সফরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)।

জামুকার চেয়ারম্যান মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তাঁর নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিনটি দল তিনটি দেশে যাবেন। কতজন যাবেন তা এখনো ঠিক হয়নি। জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে বিদেশ সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছে জামুকা। জামুকার ৬৫তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

মন্ত্রীর মতে, অন্য দেশগুলো যেভাবে তাদের মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান জানায়, একইভাবে বাংলাদেশও নিজেদের সম্মান জানাতে চায়। ওই দেশগুলো কীভাবে সম্মান জানায়, তা দেখতেই তাঁদের এই সফর।

তবে এ ধরনের সফরের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, মুক্তিযোদ্ধাদের যে স্মৃতি এ দেশের আনাচকানাচে পড়ে আছে, তা আগে সংরক্ষণ করা উচিত। মন্ত্রণালয়ের উচিত মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বই, দলিল, সে সময়ের পত্রপত্রিকা, মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেট, তথ্যচিত্র, ভিডিও ফুটেজ, চলচ্চিত্র, অডিও ও আলোকচিত্র নিয়ে একটি গ্রন্থাগার ও আর্কাইভ করা। এসব কাজের জন্য বিদেশ সফরের প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন না তাঁরা।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির জাপান সফরের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাপানের ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধ কোথায়? জাপান একটি গণহত্যাকারী দেশ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তাদের দেশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। তারা এখনো আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। তাহলে জাপান সফর কেন? আর কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম থেকে আমাদের শেখার কিছু নেই। বরং তারা এসে আমাদের কাছ থেকে শিখে যেতে পারে। আর যদি কোনো দেশে সফরে যায়, তবে যেতে হবে প্রকল্প পরিচালক ও প্রকৌশলীদের। অন্যরা গিয়ে কী করবে?’

শাহরিয়ার কবির ২০১৩ সালে তুরস্ক সফর করে ফিরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও স্মৃতি রক্ষার বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই প্রতিবেদন আজও আলোর মুখ দেখেনি।

প্রসঙ্গত, দেড় যুগ আগে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠিত হলেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে কোনো দলিল বা ইতিহাসবিষয়ক গ্রন্থ প্রকাশ করেনি মন্ত্রণালয়। নেই কোনো গণগ্রন্থাগার ও আর্কাইভ। এ ছাড়া অধ্যাপক ও গবেষক মুনতাসীর মামুন মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে একটি আর্কাইভ করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু ওই প্রস্তাবও আমলে নেওয়া হয়নি।

ক্রেস্টের সোনা জালিয়াতির ঘটনার পর বন্ধ হয়ে গেছে বিদেশি বন্ধুদের সম্মাননা দেওয়ার উদ্যোগও। মোট ৬৫০ জন বিদেশি বন্ধুকে এ সম্মাননা দেওয়ার কথা ছিল।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ সমুন্নত রেখে কাজ করার প্রত্যয় নিয়ে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ সরকার। দায়িত্ব নেওয়ার পর তৃণমূল পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্প, মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থানগুলো সংরক্ষণ ও স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণসহ ছয়টি প্রকল্প নেওয়া হয়।