'বাড়িতে শোক করার মানুষটাও নেই'

মুন্সিগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত স্বামী, মেয়ে ও নাতি-নাতনির লাশ দেখতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন বর রুবেলের মা। গতকাল লৌহজংয়ের ব্রাহ্মণগাঁও উচ্চবিদ্যালয় মাঠে।  ছবি: প্রথম আলো
মুন্সিগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত স্বামী, মেয়ে ও নাতি-নাতনির লাশ দেখতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন বর রুবেলের মা। গতকাল লৌহজংয়ের ব্রাহ্মণগাঁও উচ্চবিদ্যালয় মাঠে। ছবি: প্রথম আলো

বিয়ের পর বাড়িতে নববধূ আসবে। বরের আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীরা নতুন বউকে বরণ করে নেবে। পরদিন হবে বউভাত। আনন্দ–উল্লাসে মাতবে সবাই। এমনটাই হওয়ার কথা ছিল মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার কনকসার গ্রামের বটতলা এলাকার রুবেল ব্যাপারীর বাড়িতে। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা সব স্বপ্ন, আয়োজন যেন তছনছ করে দিয়েছে। নবদম্পতির বদলে বাড়িতে ফিরেছে ১০ লাশ। বিয়েবাড়িতে এখন চলছে মাতম।

গতকাল বর রুবেলের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, বিয়েবাড়ি পরিণত হয়েছে শোকের বাড়িতে। নতুন বউকে দেখতে আসার পরিবর্তে পাড়া-প্রতিবেশী ও স্বজনেরা এসেছেন চেনা মানুষগুলোকে শেষবিদায় জানাতে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে রুবেল বলেন, ‘বাবা, বোন, আত্মীয় সবাই চিরতরে চলে গেছে। আমাদের বাড়িতে এখন আর শোক করার মানুষটাও নেই।’

ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে বিয়ে ঠিক হয়েছিল রুবেলের। শুক্রবার দুপুরে দুটি গাড়িতে করে যাত্রা করেছিলেন বরের স্বজন ও প্রতিবেশীরা। সামনের মাইক্রোবাসে ছিল বরের বাবা, বোন, ভাগনিসহ ১২ জন আরোহী। এর মধ্যে সাতজনই রুবেলের স্বজন। রুবেলসহ বরযাত্রার অন্য সদস্যরা ছিলেন পেছনের ব্যক্তিগত গাড়িতে। মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকা–মাওয়া মহাসড়কে গত শুক্রবার বেলা দুইটার দিকে স্বাধীন পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাসটির সংঘর্ষ হয়। এতে নিহত হন বরের বাবা, বোন, ভাগনিসহ ১০ জন। আহত হয়েছেন বরের খালুসহ দুজন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে আটজনের বাড়ি কনকসার গ্রামে। বরের খালাতো ভাই জাহাঙ্গীর ও মাইক্রোবাসের চালকের বাড়ি শ্রীনগরে।

গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় লৌহজং উপজেলার ব্রাহ্মণগাঁও উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে কনকসার এলাকার নিহত আটজনের জানাজা হয়। এতে অংশ নেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার সহস্রাধিক মানুষ।

রুবেলের চাচাতো ভাই আবদুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, একটা পরিবারের এতগুলো মানুষের মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যে বাড়িতে নতুন বউ আসার কথা, আনন্দের জোয়ার বয়ে যাওয়ার কথা, সেই বাড়িতেই আজ লাশের মিছিল।

এদিকে শুক্রবার রাতে জেলা প্রশাসক নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেন। এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের হাঁসাড়া থানার ওসি মো.আবদুল বাসেদ বলেন, শুক্রবারের সড়ক দুর্ঘটনায় বাসের চালকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বাসচালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স গাড়ির ভেতর পাওয়া গেছে। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।