দুদকে অনেককেই আসতে হবে: দুদক চেয়ারম্যান

যুক্তরাজ্যের উন্নয়ন সংস্থা ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের সুশাসনসংক্রান্ত দলনেতা এইজলিন বাকেরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। ছবি: দুদকের সৌজন্যে
যুক্তরাজ্যের উন্নয়ন সংস্থা ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের সুশাসনসংক্রান্ত দলনেতা এইজলিন বাকেরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। ছবি: দুদকের সৌজন্যে

দুর্নীতির ব্যাপকতা থাকলেও তা নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি খাতেই কমিশন কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আমরা হয়তো আজই সবাইকে ধরতে পারব না। তবে প্রতিকারমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে সবার কাছে একটি বার্তা দিতে সক্ষম হয়েছি যে, আজ হোক কাল হোক, সবাইকে জবাবদিহি করতে হবে। দুদকে অনেককেই আসতে হচ্ছে, অনেককেই আসতে হবে।’

আজ রোববার সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে যুক্তরাজ্যের উন্নয়ন সংস্থা ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ডিএফআইডি) সুশাসনসংক্রান্ত দলনেতা এইজলিন বাকেরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, দুর্নীতি দমনে সমন্বিত অঙ্গীকারের প্রয়োজন। কর্মপ্রক্রিয়ায় ব্যক্তি পরিবর্তন হতে পারে, কিন্তু কর্মপ্রক্রিয়ার পরিবর্তন সুশাসনের জন্য সত্যিই অন্তরায়।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, কমিশন শুধু প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নয়, প্রতিরোধমূলক কার্যক্রমও পরিচালনা করছে, যাতে দুর্নীতির ঘটনা ঘটার আগেই তা প্রতিরোধ করা যায়। কমিশনের অভিযোগ কেন্দ্রের হটলাইন-১০৬-এর তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, এতে লাখ লাখ অভিযোগ আসছে। অধিকাংশ অভিযোগ কমিশন আইনের তফসিলভুক্ত না হলেও মানুষ তাদের অভিযোগ জানানোর একটি প্ল্যাটফর্ম পেয়েছে। তারা তাদের কথা জানাতে পারছে। কমিশন থেকেও যতটা সম্ভব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মানুষের ক্ষোভ জানানোর একটি মাধ্যম হিসেবে ১০৬ ব্যবহৃত হচ্ছে।

ডিএফআইডির সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়োগসহ অন্যান্য দুর্নীতি সম্পর্কে জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ২০১৮ সালে পুলিশ বিভাগের যে নিয়োগ হয়েছে, তা যথেষ্ট স্বচ্ছ হয়েছে। আরেক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, পুলিশের সঙ্গে কমিশনের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। পুলিশের যেসব সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, সেগুলো তদন্ত করা হচ্ছে। এসব তদন্তে পুলিশের তরফ থেকে সহযোগিতার কোনো ঘাটতি নেই। শুধু পুলিশ নয়; প্রশাসন, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী যাঁর বিরুদ্ধেই অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে , সেগুলো খতিয়ে দেখা হয়। বলতে গেলে সব সেক্টরেই কাউকে না কাউকে আইনের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

প্রতিনিধিদলটির আরেকটি প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় নিয়োগ-পদোন্নতি-পদায়নে স্বচ্ছতার অভাব আছে। এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা না গেলে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে। শিক্ষকদের অনেক সময় সরকারি অন্যান্য কাজে সম্পৃক্ত করে তাঁদের মূল্যবান কর্মঘণ্টা নষ্ট করা হচ্ছে। শিক্ষকদের অন্য কাজে ব্যবহার বন্ধ করা উচিত। শিক্ষকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য তাঁদের ডিজিটাল উপস্থিতির ব্যবস্থা করার কথা সরকারকে বলেছি। মানসম্মত শিক্ষা না হলে সক্ষম মানবসম্পদ সৃষ্টি করা যাবে না।’

নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের সন্তানেরা যেন শুধু জিপিএ-৫-এর দিকে না ছোটে, নৈতিক মূল্যবোধের দিকেও ছোটে। মূল্যবোধহীন উন্নয়ন কোনো কাজে লাগে না। তাই আমাদের সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে তরুণ প্রজন্মের মাঝে নৈতিক মূল্যবোধ প্রোথিত করা যায়। সরকারি পরিষেবা দুর্নীতি ও হয়রানিমুক্ত করা না গেলে জনগণের হতাশা দূর করা কঠিন।’

ইকবাল মাহমুদ বলেন, তাই কমিশন শিক্ষাসহ ২৮টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবা প্রদানের প্রক্রিয়াগত সংস্কারের জন্য সুপারিশ সরকারের কাছে পেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতিমধ্যে এ-জাতীয় ১৩টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন সরকারের কাছে পেশ করা হয়েছে।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডিএফআইডির সুশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা তানভীর মাহমুদ, মোহাম্মদ ইউসুফ, দুদকের প্রশিক্ষণ ও আইসিটি অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম সোহেল প্রমুখ।